উইকিভ্রমণ থেকে

ফয়েজ লেক বা ফয়েজ হ্রদ বাংলাদেশের অন্যতম একটি পর্যটনস্থান। এটি চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকায় অবস্থিত একটি কৃত্রিম হ্রদ। পূর্বে এটি পাহাড়তলী লেক হিসেবে পরিচিত ছিল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখা এবং নৌকা ভ্রমণ ইত্যাদির কারণে দেশি বিদেশি ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে ফয়েজ লেক বেশ জনপ্রিয়।

অবস্থান[সম্পাদনা]

ফয়েজ লেক

চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর খুলশী এলাকার প্রধান সড়কের পাশে ফয়েজ লেকের তোরণ। সেখান থেকে কিছুটা ভেতরে এর মূল প্রবেশ পথ।

বর্ণনা[সম্পাদনা]

হ্রদের দৃশ্য
ফয়েজ লেকে নৌকা ভ্রমণ
ফয়েজ লেকের বিভিন্ন রাইড

পাহাড়ের কোলঘেঁষে আঁকাবাঁকা লেকটি অপরূপ নান্দনিক সৌন্দর্যের প্রতীক। ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত ফয়েজ লেকের অন্যতম আকর্ষণ পাহাড়ি প্রকৃতি।

ফয়েজ লেকে ভ্রমণের সুব্যবস্থা আছে। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান কিংবা ইঞ্জিন চালিত নৌকা, স্পিড বোট নিয়ে হারিয়ে যেতে পারেন অপরূপ সৌন্দর্যের মাঝে। বন্ধুবান্ধব, পরিবার-পরিজন নিয়ে পানির কলকল ধ্বনিতে মুখরিত ফয়েজ লেকে নৌভ্রমণ অন্যরকম আনন্দদায়ক। ফয়েজ লেকের চারপাশে পাহাড়ের বুক চিরে ছুটে চলা আপনাকে বিমুগ্ধ করবে। গৌধূলিলগ্নে সূর্য যখন অন্তিম নীলিমায় ডুবে যায়, তখনকার লেকের পরিবেশ খুবই চমৎকার। উপরে টিলায় আছে বনভোজন কেন্দ্র। বনভোজনের জন্য ফয়েজ লেক দারুণ একটা জায়গা। আরেকটি টিলার উপরে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার রয়েছে। পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে চট্টগ্রাম শহরের বার্ডস আই ভিউ দেখা যায়।

ফয়েজ লেকের অ্যামিউজমেন্ট ওয়ার্ল্ড এ বেশ কিছু আধুনিক রাইড রয়েছে। সার্কাস সুইং, বাম্পার কার, বাম্পার বোট, ফ্যামিলি রোলার কোস্টার, জায়ান্ট ফেরিস হুইল, ড্রাই স্লাইড, ফ্যামিলি ট্রেইন, প্যাডেল বোট, ফ্লোটিং ওয়াটার প্লে, পাইরেট শিপের মতো মজাদার সব রাইড। এছাড়াও রয়েছে সি ওয়ার্ল্ড ওয়াটাপার্ক। আধুনিক ওয়াটাপার্কের বিভিন্ন রাইড যেমন স্প্লাশ পুল, ওয়াটার কোষ্টার রাইডার ইত্যাদি আছে পার্কটিতে। অ্যামিউজমেন্ট ওয়ার্ল্ডের উত্তরে টিলার উপরে মূল ফয়েজ লেক। স্বচ্ছ পানির লেকের চার পাশ জুড়ে রয়েছে সবুজ চাদরে মোড়া ঘেরা উঁচু উঁচু পাহাড়। আসমানী, গগনদ্বীপ, জলটুঙ্গি ইত্যাদি নাম রয়েছে এক একটি পাহাড়ের। এসব পাহাড়ের সংরক্ষিত বনে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, চিত্রা হরিণ, খরগোশ আরো অনেক বন্যপ্রাণীর দেখে মেলে।

লেকের আশপাশের আরো কয়েকটি ভ্রমনপ্রিয় স্থানও একই সঙ্গে ঘুরে আসার সুযোগ রয়েছে। যার মধ্যে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা, পৃথক কৃত্তিম হৃদ, বাটালি পাহাড় উল্লেখযোগ্য।

যেভাবে যাবেন[সম্পাদনা]

চট্টগ্রাম থেকে[সম্পাদনা]

চট্টগ্রাম শহরের যে কোনো জায়গা থেকে খুব সহজেই ফয়েজ লেকে যাওয়া যায়। আপনি চট্রগ্রাম নগরীর থেকে সরাসরি বাস সার্ভিসে করে চলে যেতে পারেন লেকে। আর নিজে যদি আলাদা যেতে চান তবে সিএনজি অটো রিক্সা কিংবা মাইক্রোবাস মিনি কারে করে যেতে পারবেন।

ঢাকা থেকে[সম্পাদনা]

ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও আকাশপথে যেতে পারেন চট্টগ্রাম শহরে। ঢাকার বাসগুলো সাধারণত শহরে প্রবেশ করে ফয়েজ লেকের সামনের সড়ক থেকেই। ঢাকা থেকে সড়কপথে এসি ও নন এসি বাস যায় চট্টগ্রামে।

কোথায় থাকবেন[সম্পাদনা]

প্রকৃতির মাঝে রিসোর্ট

প্রকৃতির মাঝে নির্জনতায় অবকাশ যাপনের জন্য ফয়েজ লেকে বেশ কিছু রিসোর্ট রয়েছে। নির্জনতায় সময় কাটানোর জন্য আদর্শ জায়গা এসব রিসোর্ট। দর্শনার্থীরা রিসোর্ট ভাড়া করে থাকতে পারেন। লেক ও পাহাড়মূখী দু ধরণের ঘরই আছে এখানে। বারান্দায় বসে লেক আর পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগের ব্যবস্থা আছে এখানে। ফয়েজ হ্রদের আশেপাশের মনোরম পরিবেশ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণে প্রতি বছর দেশি বিদেশি বহু পর্যটক ছুটে আসেন। মধুচন্দ্রিমার জন্যও এখানকার রিসোর্ট আকর্ষণীয় জায়গা।

এছাড়া চট্টগ্রামের অংলকার মোড়ে, নিউমার্কেট এর স্টেশন রোড এলাকায় বিভিন্ন মানের হোটেল আছে, পছন্দ মতো কোন এক হোটেলে রাত্রিযাপন করতে পারেন। ফয়েজলেক থেকে বেরিয়ে আসলে কাছাকাছি বিভিন্ন মানের হোটেল আছে।

খাওয়া দাওয়া[সম্পাদনা]

ফয়েজলেকের ভিতরেই খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। তুলনামুলক ভাবে কম দামে খেতে চাইলে ফয়েজলেক থেকে বেরিয়ে আসলেই খাওয়া জন্য অনেক রেষ্টুরেন্ট দেখতে পাবেন।

চিত্রশালা[সম্পাদনা]