উইকিভ্রমণ থেকে

রাজশাহী বিভাগ বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। ১৮,১৫৪ বর্গ কি.মি. আয়তন বিশিষ্ট এই বিভাগ ৮টি জেলা, ৬৬টি উপজেলা এবং ৫৬৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। ১৮২৯ খ্রিষ্টাব্দে উত্তরবঙ্গের বিশাল অংশ নিয়ে একটি বিভাগ গঠিত হয়েছিল। সে সময় এর সদর দফতর ছিল ভারতের মুর্শিদাবাদ। ৮টি জেলা নিয়ে এই বিভাগটি গঠিত হয়েছিল। জেলাগুলো ছিলঃ মুর্শিদাবাদ, মালদাহ, জলপাইগুড়ি, রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, পাবনা ও রাজশাহী। কয়েক বছর পর বিভাগীয় সদর দপ্তর বর্তমান রাজশাহী শহরের রামপুর-বোয়ালিয়া মৌজায় স্থানান্তরিত হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৮৮৮ সালে বিভাগীয় সদর দপ্তর ভারতের জলপাইগুড়িতে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৪৭ সালের পাক-ভারত বিভাজনের পর তদানীন্তন পূর্ব-পাকিস্তানের বিভাগে পরিণত করা হয় রাজশাহীকে এবং এই বিভাগের সদর দফতর রাজশাহী শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলো ছিলঃ কুষ্টিয়া, খুলনা, দিনাজপুর, বগুড়া, পাবনা, যশোর, রংপুর ও রাজশাহী। ১৯৬০ সালে রাজশাহী বিভাগের খুলনা, কুষ্টিয়া, যশোর এবং ঢাকা বিভাগের বরিশাল জেলা কর্তন করে খুলনা বিভাগ গঠন করা হয়। ফলে রাজশাহী বিভাগের জেলার সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ এবং জেলগুলো ছিলঃ দিনাজপুর, পাবনা, বগুড়া, রংপুর ও রাজশাহী। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর, ৫ টি জেলা নিয়ে রাজশাহী বিভাগ বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৮৪ সালে এই বিভাগের প্রতিটি জেলার মহকুমা জেলাতে পরিণত হয়। তখন এই বিভাগের মোট জেলার সংখ্যা ছিল ১৬টি। ২০১০ সালে রংপুর অঞ্চলের ৮টি জেলা নিয়ে রংপুর বিভাগ গঠন করা হয় এবং রাজশাহী অঞ্চলের ৮টি জেলা নিয়ে বর্তমান রাজশাহী বিভাগ পুনঃগঠিত হয়।

জেলা[সম্পাদনা]

মানচিত্র
রাজশাহী বিভাগের মানচিত্র

কীভাবে যাবেন?[সম্পাদনা]

স্থলপথে[সম্পাদনা]

সড়কপথ[সম্পাদনা]

সড়ক যোগে রাজধানী ঢাকা থেকে বাস যোগে যেকোন জেলাতে যাওয়া যায়। ঢাকার গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে রাজশাহী বিভাগের সকল রুটের বাস পাওয়া যায়। এছাড়া কলাবাগান বাসস্ট্যান্ড থেকেও কিছু কিছু রুটের বাস পাওয়া যায়।

রেলপথে[সম্পাদনা]

এই বিভাগের চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলা ব্যতীত সকল জেলাতেই আন্তঃনগর রেল চলাচল করে। চাঁপাই নবাবগঞ্জে রুটে শুধু লোকাল ট্রেন যাতায়াত করে। ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন ও বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে রাজশাহী বিভাগের সকল রুটের আন্তঃনগর রেল পাওয়া যায়।

ঢাকা হতে উত্তরবঙ্গ বা রাজশাহী বিভাগগামী আন্তঃনগর ট্রেনের সময়সূচীঃ

ট্রেন নং নাম বন্ধের দিন হইতে ছাড়ে গন্তব্য
৭০৫ একতা এক্সপ্রেস মঙ্গলবার ঢাকা ১০০০ দিনাজপুর
৭৫১ লালমনি এক্সপ্রেস শুক্রবার ঢাকা ২২১০ লালমনিরহাট
৭৫৩ সিল্কসিটি এক্সপ্রেস রবিবার ঢাকা ১৪৪০ রাজশাহী
৭৫৭ দ্রুতযান এক্সপ্রেস বুধবার ঢাকা ২০০০ দিনাজপুর
৭৫৯ পদ্মা এক্সপ্রেস মঙ্গলবার ঢাকা ২৩১০ রাজশাহী
৭৬৫ নীলসাগর এক্সপ্রেস সোমবার ঢাকা ০৮০০ চিলাহাটি
৭৬৯ ধূমকেতু এক্সপ্রেস শনিবার ঢাকা ০৬০০ রাজশাহী
৭৭১ রংপুর এক্সপ্রেস রবিবার ঢাকা ০৯০০ রংপুর
৭৭৬ সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস শনিবার ঢাকা ১৭০০ সিরাজগঞ্জ

আকাশপথে[সম্পাদনা]

রাজশাহী বিভাগে অবস্থিত একমাত্র বিমান বন্দর 'শাহ মখদুম বিমানবন্দর' রাজশাহীতে অবস্থিত। শুধু আভ্যন্তরীন রুটের উড়োজাহাজ উঠা-নামা করে। বর্তমানে শুধু রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী রুটে চলাচল করে। বিমান বাংলাদেশ, নভোএয়ার ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স এই রুটে সেবা দিয়ে থাকে। বিমান ও সময়ভেদে একপথে ভাড়া ৩২০০ থেকে ৫০০০ টাকা। এছাড়া বগুড়ায় একটি বিমানবন্দর রয়েছে। যেটি শুধু বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হয়।

কী দেখবেন[সম্পাদনা]

  • 1 পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার (সোমপুর মহাবিহার), নওগাঁএটি একটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান। পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপাল দেব (৭৮১-৮২১) অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন। ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে স্যার আলেকজান্ডার কানিংহাম এই বিশাল স্থাপনা আবিষ্কার করেন। পাহাড়পুরকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বৌদ্ধবিহার বলা হয়। উইকিপিডিয়ায় পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার (Q305044)
  • 2 মহাস্থানগড় (পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগর), বগুড়া (বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার(৬.৮ মাইল) উত্তরে বগুড়া রংপুর মহাসড়কের পাশে।)। মহাস্থানগড় বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি। উইকিপিডিয়ায় মহাস্থানগড় (Q3085127)
  • 3 পুঠিয়া রাজবাড়ী (পাঁচআনি জমিদারবাড়ী), পুঠিয়া, রাজশাহী উইকিপিডিয়ায় পুঠিয়া রাজবাড়ী (Q17069850)
  • 4 কুসুম্বা মসজিদ, নওগাঁ (নওগাঁর বালুডাঙ্গা বাস টার্মিনাল হতে বাস অথবা সিএনজি অটো রিক্সাযোগে যেতে হবে মান্দায়। সেখানে নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়ক হতে তিন মাইল দক্ষিণ-পূর্ব দিকে কুসুম্বা গ্রামে এর অবস্থান। এছাড়া রাজশাহীর রেলগেট বাসস্ট্যান্ড হতে মান্দায় যাওয়ার বাস পাওয়া যায়।)। আফগানী শাসনামলের শুর বংশের শেষদিকের শাসক গিয়াসউদ্দিন বাহাদুর শাহের আমলে সুলায়মান নামে একজন এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। মসজিদটি দৈর্ঘ্যে ৫৮ফুট, প্রস্থে ৪২ফুট। দুই সারিতে ৬টি গোলাকার গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের গায়ে রয়েছে লতাপাতার নকশা। উইকিপিডিয়ায় কুসুম্বা মসজিদ (Q13057540)
  • 5 বাঘা মসজিদ, বাঘা, রাজশাহী (রাজশাহী জেলা সদর হতে প্রায় ৪১ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে বাঘা উপজেলায় অবস্থিত)। উইকিপিডিয়ায় বাঘা মসজিদ (Q2656778)
  • 6 উত্তরা গণভবন (দিঘাপাতিয়া রাজবাড়ি), নাটোর (নাটোর শহর থেকে প্রায় ২.৪ কিমি দূরে প্রাসাদটি অবস্থিত।)। আঠারো শতকে নির্মিত দিঘাপতিয়া মহারাজাদের বাসস্থান। এটি বাংলাদেশের নাটোর শহরে অবস্থিত। বর্তমানে এটি উত্তরা গণভবন বা উত্তরাঞ্চলের গভর্মেন্ট হাউস নামে পরিচিত। উত্তরা গণভবনের মধ্যে উত্তরা গণভবন সংগ্রহশালা অবস্থিত । উইকিপিডিয়ায় উত্তরা গণভবন (Q7903371)
  • 7 হার্ডিঞ্জ ব্রিজ (হার্ডিঞ্জ সেতু), পাকশী (ভেড়ামারা উপজেলা সদর হতে প্রায় ৮.৫ কিমি উত্তরে এবং ঈশ্বরদী উপজেলার সদর হতে প্রায় ৮ কিমি দক্ষিণে পদ্মা নদীর উপর সেতুটি অবস্থিত।)। এই সেতুর নির্মাণকাল ১৯০৯-১৯১৫। তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের নাম অনুসারে এই সেতুর নামকরণ করা হয়। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের দৈর্ঘ্য ১,৭৯৮.৩২ মিটার বা ৫৮৯৪ফুট বা ১.৮ কিমি। এর উপর দুটি ব্রড-গেজ রেললাইন রয়েছে। উইকিপিডিয়ায় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ (Q5656156)
  • 8 ছোট সোনা মসজিদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ উইকিপিডিয়ায় ছোট সোনা মসজিদ (Q7560724)
  • 9 গোকুল মেধ, বগুড়াবগুড়া সদর থানার অন্তর্গত গোকুল গ্রামে খননকৃত একটি প্রত্নস্থল। এটি একটি প্রাচীন বৌদ্ধ মঠ। উইকিপিডিয়ায় গোকুল মেধ (Q25588540)
  • 10 চলন বিল, সিংড়া, নাটোররাজশাহী বিভাগের চারটি জেলা, আটিটি উপজেলা, ৬০টি ইউনিয়ন, ১৬০০ গ্রাম এবং ১৪টি নদী নিয়ে এর বিস্তৃতি। চলন বিলের গঠন ঐতিহাসিকভাবেই আত্রাই ও বড়াল নদীর সংকোচনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আত্রাই নদী ছিল চলন বিলের প্রধান যোগান দানকারী প্রণালী যা বৃহত্তর রাজশাহী জেলার উত্তরাংশ ও দিনাজপুর এলাকার জল নিষ্কাশন করত। বড়াল চলন বিল থেকে জল নির্গম পথ হিসেবে কাজ করে এবং বিলের পানি বহন করে যমুনা নদীতে ফেলে। চলন বিলের মধ্য দিয়ে বেশ কয়েকটি নদী প্রবাহিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- করতোয়া, আত্রাই, গুড়, বড়াল, মরা বড়াল, তুলসী, ভাদাই, চিকনাই, বরোনজা, তেলকুপি ইত্যাদি। গঠিত হওয়ার সময় চলনবিলের আয়তন ছিল প্রায় ১ হাজার ৮৮ বর্গকিলোমিটার। উইকিপিডিয়ায় চলন বিল (Q5068558)
  • 11 ভাসু বিহার, বগুড়া (প্রথমে বাসে করে বগুড়া আসতে হবে। এটি বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায়, মহাস্থানগড় থেকে ৬ কিলোমিটার পশ্চিমে বিহার ইউনিয়নের বিহার নামক গ্রামে অবস্থিত। বগুড়া শহর থেকে সিএনজি অটো রিকশা নিয়ে সহজেই ভাসুবিহার যাওয়া যায়।)। ভাসু বিহার বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন প্রত্ন নিদর্শন। স্থানীয়রা একে নরপতির ধাপ হিসেবেও অভিহিত করে। এখানে ১৯৭৩-৭৪ সালে প্রথমবারের মতো প্রত্নতাত্ত্বিক খনন শুরু হয় এবং তা পরবর্তী দুই মৌসুম অব্যাহত থাকে। ধারণা করা হয়, এটি একটি বৌদ্ধ সংঘারামের ধ্বংসাবশেষ। খননকার্যের ফলে সেখানে ব্রোঞ্জের বৌদ্ধমুর্তি, পোড়ামাটির ফলকসহ বিভিন্ন মূল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক বস্তু আবিষ্কৃত হয়েছে। চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ ৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দে এখানে এসেছিলেন। তার ভ্রমণবিবরণীতে তিনি এটাকে 'পো-শি-পো' বা বিশ্ববিহার নামে উল্লেখ করেছেন। খুব সম্ভবত এটি বৌদ্ধদের ধর্মীয় বিদ্যাপীঠ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ব্রিটিশ আমলে ভাসুবিহারকে স্থানীয় মানুষরা 'ভুশ্বুবিহার' নামে আখ্যায়িত করেছে। উইকিপিডিয়ায় ভাসু বিহার (Q13059155)

খাওয়া দাওয়া[সম্পাদনা]

রাজশাহীর বিভিন্ন অঞ্চলের বেশ কিছু বিখ্যাত খাবার রয়েছে।

  • নাটোরের কাঁচা গোল্লা, নাটোর (রাজশাহী থেকে সরাসরি নাটোরের বাসে যাওয়া যায়।)। কাঁচাগোল্লা বা নাটোরের কাঁচাগোল্লা বাংলাদেশের নাটোর জেলায় উৎপন্ন দুধ দিয়ে তৈরি এক প্রকার মিষ্টান্ন। এই মিষ্টান্নটি গরুর দুধ হতে প্রাপ্ত কাঁচা ছানা হতে প্রস্তুত করা হয় বলে একে কাঁচাগোল্লা বলে পরিচিত। যদিও নাটোরে এর উৎপত্তি হয়, তবে নাটোর ছাড়াও বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জেলায় এই মিষ্টি পাওয়া যায়। পশ্চিমবঙ্গের কিছু মিষ্টান্ন ভাণ্ডারেও এই মিষ্টি প্রস্তুত করা হয়। উইকিপিডিয়ায় কাঁচাগোল্লা
  • বগুড়ার দই, বগুড়া (রাজশাহী থেকে বাসে নাটোর এসে নাটোর থেকে বগুড়া যাওয়া যায়। এছাড়া রাজশাহী থেকে সরাসরি বাসেও বগুড়া যেতে পারবেন।)। বগুড়ার দই বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত বগুড়া জেলার বিখ্যাত মিষ্টি। দধি বা দই হল এক ধরনের দুগ্ধজাত খাদ্য যা দুধের ব্যাক্টেরিয়া গাঁজন হতে প্রস্তুত করা হয়। সারা বাংলাদেশে দই পাওয়া গেলেও স্বাদে ও গুনে অতুলনীয় হওয়ায় বগুড়ার দই দেশ ও দেশের বাইরে খুব জনপ্রিয়। এর খ্যাতি মূলত ব্রিটিশ আমল থেকে সর্বত্র ছড়িয়ে পরে। ষাটের দশকের প্রথম ভাগে বৃটেনের রানী এলিজাবেথ থেকে শুরু করে মার্কিন মুল্লুকেও গিয়েছে বগুড়ার দই। পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান বৃটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তাদের সহানুভূতি পেতে পাঠিয়েছিলেন এই দই। উইকিপিডিয়ায় বগুড়ার দই (Q56893397)
  • কালাই রুটি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
  • পদ্মার ইলিশ, রাজশাহী

পরবর্তীতে যান[সম্পাদনা]