উইকিভ্রমণ থেকে
শালবন বিহার, কুমিল্লা

শালবন বৌদ্ধ বিহার বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম। কুমিল্লা জেলার লালমাই-ময়নামতি প্রত্নস্থলের অসংখ্য প্রাচীন স্থাপনাগুলোর একটি এই বৌদ্ধ বিহার। এটি ১২শ প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা হিসেবে চিহ্নিত।

জানুন[সম্পাদনা]

ধারণা করা হয় যে খৃস্টীয় সপ্তম শতাব্দীর শেষ থেকে অষ্টম শতাব্দীর প্রথম ভাগে দেববংশের চতুর্থ রাজা শ্রীভবদেব এ বৌদ্ধ বিহারটি নির্মাণ করেন। শালবন বিহারের ছয়টি নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ পর্বের কথা জানা যায়। খৃস্টীয় অষ্টম শতাব্দীর মধ্যে তৃতীয় পর্যায়ে কেন্দ্রীয় মন্দিরটি নির্মাণ করা হয় ও বিহারটির সার্বিক সংস্কার হয় বলে অনুমান করা হয়। চতুর্থ ও পঞ্চম পর্যায়ের নির্মাণকাজ ও সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয় নবম-দশম শতাব্দীতে।

কীভাবে যাবেন[সম্পাদনা]

কুমিল্লার জেলার কোটবাড়িতে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমীর কাছে কাছে লালমাই পাহাড়ের মাঝামাঝি এলাকায় এ বিহারটির অবস্থান। বাংলাদেশের যেকোন জায়গা থেকে বাসে করে কুমিল্লায় যোগাযোগ আছে।

শালবন বিহার কুমিল্লা শহর হতে ৮কি.মি দূরে কোট বাড়িতে অবস্থিত। ঢাকা হতে কুমিল্লার দূরত্ব ৯৭কি.মি। ট্রেনে যেতে প্রায় ১৯৭কি.মি পথ অতিক্রম করতে হয়

ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লা মাত্র ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের মত সময় লাগে। ঢাকার বিভিন্ন স্থান হতে ঢাকা কুমিল্লা রুটে অসংখ্য বাস সার্ভিস আছে। সায়েদাবাদ থেকে তিশা অথবা এশিয়া লাইন নন এসি বাসে জনপ্রতি ১৫০-২০০ টাকা ভাড়ায় কুমিল্লা আসা যাবে। কমলাপুর থেকে রয়েল, উপকূল, স্টার লাইন অথবা বি আর টিসি (এসি/নন-এসি) বাসে জনপ্রতি ১৫০-৩৫০ টাকা ভাড়ায় কুমিল্লা যাওয়া যাবে।

এছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে করে কুমিল্লা আসা যাবে। ধাকা থেকে চট্টগ্রামগামী (সুবর্ণা ও সোনার বাংলা বাদে) প্রায় সকল ট্রেনই কুমিল্লা স্টেশনে থামে। ঢাকা থেকে কুমিল্লা জনপ্রতি ভাড়া ৯০-২৫০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লায় প্রিন্স কিংবা সৌদিয়া বাস করে আসা যাবে বা যে কোন ঢাকাগামী বাসে করে এসে কুমিল্লায় নামতে হবে।

কুমিল্লা আসার পর[সম্পাদনা]

কুমিল্লা আসার পর টমছম ব্রীজ বাস স্ট্যান্ডে আসতে হবে। টমছম ব্রীজ বাস স্ট্যান্ডের পাশেই কোটবাড়ি যাওয়ার সিএনজি স্ট্যান্ড রয়েছে। জনপ্রতি ১০ টাকা ভাড়ায় কোটবাড়ি যাওয়া যাবে। কোটবাড়ি আসার পর থেকে অটোরিকসা করে ৫ টাকা ভাড়ায় দিয়ে শালবন বিহারে পৌঁছানো যাবে। অথবা কোটবাড়ি বিশ্বরোড থেকে স্থানীয় সিএনজি করে শালবন বিহার আসা যাবে। কুমিল্লার যে কোন জায়গা থেকে সিএনজি/অটো রিক্সা করে আসা যাবে। শালবন বিহারে প্রবেশের জন্য ২০ টাকার টিকেট কাটতে হবে।

দেখুন[সম্পাদনা]

আকারে এটি চৌকো। শালবন বিহারের প্রতিটি বাহু ১৬৭.৭ মিটার দীর্ঘ। বিহারের চার দিকের দেয়াল পাঁচ মিটার পুরু। কক্ষগুলো বিহারের চার দিকের বেষ্টনী দেয়াল পিঠ করে নির্মিত। বিহারে ঢোকা বা বের হওয়ার মাত্র একটাই পথ ছিল। এ পথ বা দরজাটি উত্তর ব্লকের ঠিক মাঝামাঝি স্থানে রয়েছে। প্রতিটি কক্ষের মাঝে ১.৫ মিটার চওড়া দেয়াল রয়েছে। বিহার অঙ্গনের ঠিক মাঝে ছিল কেন্দ্রীয় মন্দির।

শালবন বৌদ্ধ বিহার

কক্ষ[সম্পাদনা]

বিহারে সর্বমোট ১৫৫টি কক্ষ আছে। কক্ষের সামনে ৮.৫ ফুট চওড়া টানা বারান্দা ও তার শেষ প্রান্তে অনুচ্চ দেয়াল। প্রতিটি কক্ষের দেয়ালে তিনটি করে কুলুঙ্গি রয়েছে। কুলুঙ্গিতে দেবদেবীর মূর্তি, তেলের প্রদীপ ইত্যাদি রাখা হতো। এই কক্ষগুলোতে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা থাকতেন। সেখানে বিদ্যাশিক্ষা ও ধর্মচর্চা করতেন।

হলঘর[সম্পাদনা]

বিহারের বাইরে প্রবেশদ্বারের পাশে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে একটি হলঘর রয়েছে। চার দিকের দেয়াল ও সামনে চারটি বিশাল গোলাকার স্তম্ভের ওপর নির্মিত সে হলঘরটি ভিক্ষুদের খাবার ঘর ছিল বলে ধারণা করা হয়। হলঘরের মাপ ১০ মিটার গুণন ২০ মিটার। হলঘরের চার দিকে ইটের চওড়া রাস্তা রয়েছে।

প্রত্নতাত্ত্বিক খনন[সম্পাদনা]

প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে বিহারটির ধ্বংসাবশেষ থেকে আটটি তাম্রলিপি, প্রায় ৪০০টি স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, অসংখ্য পোড়া মাটির ফলক বা টেরাকোটা, সিলমোহর, ব্রোঞ্জ ও মাটির মূর্তি পাওয়া গেছে। এগুলো বাংলাদেশের প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের স্বাক্ষর বহন করছে।

রাত্রিযাপন করুন[সম্পাদনা]

কুমিল্লা শহরে কুমিল্লা ক্লাব, কুমিল্লা সিটি ক্লাবসহ বেশকিছু ভালো মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলে ১০০০ থেকে ৩০০০ টাকায় রাত্রি যাপন করতে পারবেন। এছাড়া মাঝারি মানের হোটেলের মধ্যে হোটেল চন্দ্রিমা, হোটেল শালবন, হোটেল আবেদিন, হোটেল সোনালী, হোটেল নিদ্রাবাগ, আশীক রেস্ট হাউস, হোটেল নুরজাহান উল্লেখযোগ্য।

পরবর্তীতে যান[সম্পাদনা]

  • আনন্দ বিহার, কোটবাড়ি এলাকায় অবস্থিত
  • কোটিলা মুড়া, কুমিল্লার ময়নামতী সেনানিবাস এলাকার একটি প্রত্নস্থান। শালবন বিহার থেকে প্রায় তিন মাইল উত্তরে এর অবস্থান।
  • লালমাই পাহাড়