উইকিভ্রমণ থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন

সিলেট শহর হলো বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শহর, যা সিলেট বিভাগের অন্তর্গত সিলেট জেলায় পড়েছে। এটি মূলত সিলেট সিটি কর্পোরেশন, যা ২৭টি ওয়ার্ডে বিভক্ত এবং সুরমা নদীর উভয় পারে বিস্তৃত।

কীভাবে যাবেন?[সম্পাদনা]

স্থলপথে[সম্পাদনা]

সড়ক পথে ঢাকা হতে সিলেটের দূরত্ব ২৪১ কিলোমিটার এবং রেলপথে ঢাকা হতে সিলেট রেল স্টেশনের দূরত্ব ৩১৯ কিলোমিটার।

সড়কপথ[সম্পাদনা]

ঢাকার সায়েদাবাদ বাস স্টেশন থেকে সিলেটে আসার সরাসরি দুরপাল্লার এসি ও নন-এসি বাস সার্ভিস আছে; এগুলোতে সময় লাগে ৪.৩০ হতে ৬ ঘণ্টা। ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে আল-মোবারাকা সোহাগ, হানিফ, শ্যামলী, এনা, ইউনিক, মামুন, সাউদিয়া, গ্রীনলাইন, মিতালি প্রভৃতি পরিবহন কোম্পানীর বাস আছে প্রতি ১০ মিনিট পর পর।

  • সোহাগ পরিবহন: ☎ ০২-৯৩৩১৬০০ (ফকিরাপুল), ৯১৩২৩৬০ (কমলাপুর), ৯১৩২৩৬০ (কল্যাণপুর), ৭১০০৪২২ (আরমবাগ), ০৮২১-৭২২২৯৯ (সোবাহানীঘাট, সিলেট);
  • আল-মোবারকা পরিবহন: ☎ ০২-৭৫৫৩৪৮৩, ০৪৪৭৭৮০৩৪২২, মোবাইল: +৮৮০১৭২০-৫৫৬১১৬, +৮৮০১৮১৯-১৮৩৬১১, +৮৮০১৭১৫-৮৮৭৫৬৬;
  • গ্রীন লাইন পরিবহন: ☎ ০২-৭১৯১৯০০ (ফকিরাপুল), +৮৮০১৭৩০-০৬০০৮০ (কল্যাণপুর), ০৮২১-৭২০১৬১ (সোবাহানীঘাট, সিলেট);
  • হানিফ এন্টারপ্রাইজ: মোবাইল +৮৮০১৭১৩-৪০২৬৬১ (কল্যাণপুর), +৮৮০১৭১১৯২২৪১৩ (কদমতলী বাসস্ট্যান্ড, সিলেট);
  • শ্যামলী পরিবহন: ☎ ০২-৯০০৩৩১, ৮০৩৪২৭৫ (কল্যাণপুর), +৮৮০১৭১৬০৩৬৬৮৭ (কদমতলী বাসস্ট্যান্ড, সিলেট)।
  • ঢাকা-সিলেট রুটে সরাসরি চলাচলকারী পরিবহনে আসার ক্ষেত্রে ভাড়া হলো:
    • এসি বাসে - ৯০০/- (রেগুলার) ও ১২০০/- (এক্সিকিউটিভ) এবং
    • নন-এসি বাসে - ৪৭০/-।

রেলপথ[সম্পাদনা]

ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন বা চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা ট্রেনে সরাসরি সিলেট শহরে আসা যায়। কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে প্রতিদিন একাধিক ট্রেন সিলেটের উদ্দেশ্যে ছাড়ে। ঢাকা–সিলেট এবং চট্টগ্রাম–সিলেট রুটে চলাচলকারী ট্রেনগুলো হলো:

ট্রেন নং নাম বন্ধের দিন হইতে ছাড়ে গন্তব্য
আন্তঃনগর ট্রেন
৭০৯ পরাবত এক্সপ্রেস মঙ্গলবার ঢাকা ০৬২০ সিলেট
৭১০ সিলেট ১৫৪৫ ঢাকা
৭১৭ জয়ন্তীকা এক্সপ্রেস বৃহস্পতিবার ঢাকা ১১১৫ সিলেট
৭১৮ সিলেট ১১১৫ ঢাকা
৭১৯ পাহাড়ীকা এক্সপ্রেস শনিবার চট্টগ্রাম ৯০০০ সিলেট
৭২০ সিলেট ১০১৫ চট্টগ্রাম
৭২৩ উদয়ন এক্সপ্রেস রবিবার চট্টগ্রাম ২১৪৫ সিলেট
৭২৪ সিলেট ২১৪০ চট্টগ্রাম
৭৩৯ উপবন এক্সপ্রেস বুধবার ঢাকা ১৫৩০ সিলেট
৭৪০ - সিলেট ২৩৩০ ঢাকা
৭৭৩ কালনী এক্সপ্রেস শুক্রবার ঢাকা ০৬১৫ সিলেট
৭৭৪ সিলেট ০৬১৫ ঢাকা
মেইল/এক্সপ্রেস ট্রেন
সুরমা মেইল ঢাকা ২১০০ সিলেট
১৪ জালালাবাদ এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম ২০১৫ সিলেট
১৭ কুশিয়ারা এক্সপ্রেস আখাউড়া ১৬১০ সিলেট

আকাশ পথে[সম্পাদনা]

দেখুন[সম্পাদনা]

সিলেট শহরের যেকোন জায়গা থেকে রিক্সা, মোটর সাইকেল, সিএনজি অটো রিক্সা বা গাড়ীযোগে সহজেই সিলেটের শহরে ভ্রমণ করা যায়। শহরের ভেতরের চলাফেরার জন্য উবারের বাইক সার্ভিস রয়েছে। এছাড়া যাত্রী অ্যাপের মাধ্যমে গাড়ী ভাড়া করে শহর ও শহরের বাইরে যাতায়াত করা যেতে পারে।

শাহজালালের মাজার

হযরত শাহজালালের মাজার সিলেটে শহরের অন্যতম প্রধান দর্শনীয় স্থান। এটি সিলেট শহরের ঠিক মধ্যস্থলে এবং '০' পয়েন্টের ১ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে। স্থানীয়ভাবে এলাকাটিকে দরগা এলাকা এবং প্রবেশপথটিকে দরগা গেইট বলা হয়। এটি একটি আধ্যাত্মিক স্থাপনা, যা মূলত ১৩০৩ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশে আগত পাশ্চাত্যের ইসলাম ধর্মপ্রচারক শাহ জালালের বাসস্থান ও শেষ সমাধি। এই মাজার বা দরগাহ সিলেট শহরের উত্তর প্রান্তে একটি টিলার উপর অবস্থিত। কারো কারো মতে সিলেট ভূমির মুসলিম সভ্যতা ও ধর্মমত এই দরগাহকে কেন্দ্র করে প্রসার লাভ করেছে।

শাহ পরাণের মাজার

মধ্যপ্রাচ্য হতে বাংলাদেশে আসা ইসলাম ধর্ম প্রচারক শাহ জালালের অন্যতম সঙ্গী অনুসারী শাহ পরাণের সমাধি। শাহ জালালের দরগাহ থেকে প্রায় ৮ কি.মি. দুরত্বে সিলেট শহরের পূর্ব দিকে খাদিম নগর এলাকায় অবস্থিত। এলাকাটির নাম খাদিমনগর হলেও স্থানীয়ভাবে এলাকাটিকে শাপরাণের দরগা এলাকা এবং প্রবেশপথটিকে শাপরাণ গেইট বলা হয়।

মালনীছড়া চা বাগান

মালনীছড়া চা বাগান সিলেটের এয়ারপোর্ট রোডে অবস্থিত। এটি সিলেটের অন্যতম একটি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক স্থান হিসাবে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন আকর্ষক স্থান। ১৮৫৪ সালে ১৫০০ একর জায়গা জুড়ে প্রতিষ্ঠিত উপমহাদেশের প্রথম চা বাগানটি এটি। স্থানটি সিলেট শহরের '০' পয়েন্টের ৫ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে।

ক্বীন ব্রিজের পার্শ্ববর্তী আলী আমজদের ঘড়ি।
ক্বীন ব্রীজ

ক্বীন ব্রীজ বিংশ শতকের তিরিশের দশকে আসাম প্রদেশের গভর্ণর মাইকেল ক্বীন সিলেট সফরে আসলে তাঁর স্মৃতিকে অম্লান করে রাখতে লৌহ নির্মিত হয় ১৯৩৬ সালে। এটি সিলেট শহরের ঠিক মধ্যস্থলে এবং '০' পয়েন্টের ১০০ মিটারের মধ্যে রয়েছে। স্থানীয়ভাবে এই ব্রীজটি “পুরান পুল” ও এলাকাটি “সুরমা ব্রীজ এলাকা” এবং ব্রীজের প্রবেশপথ দুটিকে “পুলের মুখ” বলা হয়। কদমতলি বাস টার্মিনাল বা রেল স্টেশন থেকে এটি পায়ে হাটার দূরত্বে অবস্থিত।

আলী আমজদের ঘড়ি

আলী আমজদের ঘড়ি সিলেটের অন্যতম ঐতিহাসিক নিদর্শন। ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে সিলেট মহানগরীর প্রবেশদ্বার (উত্তর সুরমা) ব্রিজের ডানপার্শ্বে সুরমা নদীর তীরে এই ঐতিহাসিক ঘড়িঘরটি নির্মাণ করেন সিলেটের কুলাউড়ার পৃত্থিমপাশার জমিদার আলী আমজদ খান। এটি সিলেট শহরের ঠিক মধ্যস্থলে এবং '০' পয়েন্টের ১০০ মিটারের মধ্যে রয়েছে।

জিতু মিয়ার বাড়ি

জিতু মিয়ার বাড়ি সিলেটের ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে সিলেট মহানগরীর প্রবেশদ্বার (উত্তর সুরমা) ব্রিজের ডানপার্শ্বে সুরমা নদীর তীরে কাজীরবাজার এলাকায় এই ঐতিহাসিক বাড়িটি নির্মাণ করেন সিলেটের জায়গীরদার খান বাহাদুর আবু নছর মোহাম্মদ এহিয়া ওরফে জিতু মিয়া। এটি সিলেট শহরের '০' পয়েন্টের ৫০০ মিটারের মধ্যে রয়েছে।

সিলেট নগরীর শেখঘাটে কাজীরবাজারের দক্ষিণ সড়কের ধারে ১ দশমিক ৩৬৫ একর ভুমি জুড়ে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী জিতু মিয়ার বাড়ি। চুন-সুরকি দিয়ে নির্মিত মুসলিম স্থাপত্য কলার অনন্য নিদর্শন এ দালানটি। বর্তমান কাজিরবাজার গরুর হাট ছিল কাজিদের মূল বাড়ি। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে বাড়িটি লন্ডভন্ড হয়ে গেলে বর্তমান জায়গায় বাড়িটি স্থানান্তরিত হয়। ১৯১১ সালে এ বাড়ির সামনের দালানটি নির্মাণ করা হয়।

শাহী ঈদগাহ

শাহী ঈদগাহ সিলেট সদরের অন্তর্গত কাজীটুলা (শাহী ঈদগাহ) এলাকায় অবস্থিত। ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে সিলেট মহানগরীর মধ্যস্থলের কাজীটুলা সড়কে এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি নির্মাণ করেন সিলেটের তদানীন্তন ফৌজদার ফরহাদ খাঁ। এটি সিলেট শহরের '০' পয়েন্টের ২ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে।

ঈদগাহের উত্তরে শাহী ঈদগাহ মসজিদ, পাশে সুউচ্চ টিলার ওপর বন কর্মকর্তার বাংলো, দক্ষিণে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সিলেট কেন্দ্র, পূর্ব দিকে হযরত শাহজালাল (র.) এর অন্যতম সফরসঙ্গী শাহ মিরারজী (র.) এর মাজারের পাশের টিলার ওপর রয়েছে সিলেট আবহাওয়া অফিস।

অন্যান্য স্থান ও স্থাপনা[সম্পাদনা]

খাওয়া দাওয়া[সম্পাদনা]

স্থানীয় পর্যায়ের বিখ্যাত খাদ্য হলো আথনী পোলাও ও সাতকরা (হাতকরা)। এছাড়াও স্থানীয় আনারস, কমলা, পান, লেবু এবং কাঠালের দারুণ সুখ্যাতি রয়েছে। আরও রয়েছে চা-পাতা। হাওড় এলাকায় প্রচুর মাছ পাওয়া যায় এবং খামার ভিত্তিক হাঁস পালন করা হয়। এখানে সাধারণভাবে দৈনন্দিন খাওয়া-দাওয়ার জন্য স্থানীয় হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোতে সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়। এখানে কিছু উন্নতমানের হোটেল রয়েছে:

  • সাম্পান রেস্তোরাঁ, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট, ☎ +৮৮০১৬১২-৭২৬৭২৬;
  • পানশী রেস্তোরাঁ, জল্লারপাড় রোড, জিন্দাবাজার, সিলেট;
  • পাঁচভাই রেস্তোরাঁ, জল্লারপাড় রোড, জিন্দাবাজার, সিলেট;
  • ভোজনবাড়ি রেস্তোরাঁ, জল্লারপাড় রোড, জিন্দাবাজার, সিলেট;
  • প্রীতিরাজ রেস্তোরাঁ, জল্লারপাড় রোড, জিন্দাবাজার, সিলেট;
  • স্পাইসি : জেল রোড, সিলেট, ☎ ০৮২১-২৮৩২০০৮;
  • রয়েলশেফ : মির্জাজাঙ্গাল, সিলেট, ☎ ০৮২১-৭২৩০৯৬।

থাকা ও রাত্রি যাপনের স্থান[সম্পাদনা]

সিলেটে থাকার জন্য স্থানীয় পর্যায়ের কিছু সাধারণ মানের হোটেল রয়েছে। এছাড়াও থাকার জন্য উন্নতমানের কিছু হোটেলও রয়েছে। মৌসুমভেদে এসব হোটেলে ভাড়াতে অনেক ছাড়ের ব্যবস্থা থাকে।