উইকিভ্রমণ থেকে

সন্দ্বীপ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। এটি বাংলাদেশের অত্যন্ত প্রাচীন একটি দ্বীপ।

জানুন[সম্পাদনা]

চট্টগ্রাম জেলা সদর থেকে নৌপথে প্রায় ৫০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্ব কোণে ২২°১৬′ থেকে ২২°৪৩′ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°১৭′ থেকে ৯১°৩৭′ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে অবস্থিত সন্দ্বীপ উপজেলার আয়তন পঞ্চদশ শতাব্দীতে প্রায় ৬৩০ বর্গমাইলের হলেও ক্রমাগত নদী ভাঙনের কারণে বর্তমানে এটি মাত্র ৮০ বর্গমাইলের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপে পরিণত হয়েছে। ১৯৫৪ সালের পূর্ব পর্যন্ত সন্দ্বীপ নোয়াখালী জেলার অন্তর্ভুক্ত থাকলেও পরবর্তিতে একে চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সন্দ্বীপ থানা গঠিত হয় ১৯৮৪ সালে সন্দ্বীপ থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। সন্দ্বীপ উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন রয়েছে।

নামকরণ[সম্পাদনা]

সন্দ্বীপের নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন মতামত শোনা যায়। কারও কারও মতে বার আউলিয়ারা চট্টগ্রাম যাত্রার সময় এই দ্বীপটি জনমানুষহীন অবস্থায় আবিস্কার করেন এবং নামকরণ করেন 'শুণ্যদ্বীপ', যা পরবর্তীতে 'সন্দ্বীপে' রুপ নেয়। ইতিহাসবেত্তা বেভারিজের মতে চন্দ্র দেবতা 'সোম' এর নামানুসারে এই এলাকার নাম 'সোম দ্বীপ' হয়েছিল যা পরবর্তীতে 'সন্দ্বীপে' রুপ নেয়। কেউ কেউ দ্বীপের উর্বরতা ও প্রাচুর্যের কারণে দ্বীপটিকে 'স্বর্ণদ্বীপ' আখ্যা প্রদান করেন। উক্ত 'স্বর্ণদ্বীপ' হতে 'সন্দ্বীপ' নামের উৎপত্তি হয়েছে বলেও ধারণা করা হয়। দ্বীপের নামকরণের আরেকটি মত হচ্ছে পাশ্চাত্য ইউরোপীয় জাতিগণ বাংলাদেশে আগমনের সময় দূর থেকে দেখে এই দ্বীপকে বালির স্তুপ বা তাদের ভাষায় 'স্যান্ড-হীপ' (Sand-Heap) নামে অভিহিত করেন এবং তা থেকে বর্তমান 'সন্দ্বীপ' নামের উৎপত্তি হয়।

জনসংখ্যা[সম্পাদনা]

২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সন্দ্বীপ উপজেলার জনসংখ্যা ২,৭৮,৬০৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১,২৮,৬৫৬ জন এবং মহিলা ১,৪৯,৯৪৯ জন।

ভ্রমণ মৌসুম[সম্পাদনা]

ভ্রমণের আদর্শ সময় শীতকাল। বছরের বাকিটা সময় জলপথ বেশ উত্তাল থাকে।

কীভাবে যাবেন[সম্পাদনা]

সন্দ্বীপ যেতে সড়কপথে ঢাকা-চট্টগ্রামগামী যেকোন দূরপাল্লার বাসে যেতে হবে। নামতে হবে কুমিরা। আপনার বাসকে কুমিরা স্টিমার ঘাট যাবার স্ট্যান্ডে নামিয়ে দিতে বলুন। সেখান থেকে অটো বা রিক্সায় করে যেতে হবে কুমিরা স্টিমার ঘাটে। এখান থেকে যেতে হবে জলপথে সন্দ্বীপ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাট। মূল ভূখণ্ড থেকে সন্দ্বীপে যাওয়ার একমাত্র পথ এই জলপথ।

কুমিরা স্টিমার ঘাট থেকে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটের যাওয়ার দ্রুততম উপায় স্পিড বোট। যেতে সময় লাগে আধা ঘণ্টার মত, ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৩৮০ টাকা। স্পিড বোটের জন্য আপনাকে প্রথমে লাইন ধরে সিরিয়াল নিতে হবে। এরপর মূল ঘাটে গিয়ে অপেক্ষা করতে হবে আপনার সিরিয়াল অনুযায়ী স্পিড বোটে উঠার জন্য। এছাড়াও সময়ে সময়ে ট্রলার ছেড়ে যায় কুমিরা স্টিমার ঘাট থেকে, যাতে যেতে বেশ সময় লাগে। বর্তমানে প্রতিদিন একবার করে লঞ্চও যাওয়া-আসা করে।

সন্দ্বীপের ভেতর অভ্যন্তরীণ ভ্রমণে ব্যবহার করুন ভাড়ায় চালিত সিএনজি।

ভ্রমণ পরিকল্পনা[সম্পাদনা]

সন্দ্বীপে দিনে গিয়ে দিনে ফেরার ভ্রমণ পরিকল্পনা করা যেতে পারে। আবার একরাত সন্দ্বীপে থাকার পরিকল্পনাও করা যেতে পারে। দিনে গিয়ে দিনে ফিরতে চাইলে ঢাকা হতে আগের রাতে যথাসম্ভব আগের বাসে উঠতে হবে। সকাল সকাল কুমিরা স্টিমার ঘাট পৌঁছে সন্দ্বীপ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে সন্দ্বীপ ভ্রমণ করুন। আবার বিকাল বিকাল মূল ভূখণ্ডে ফিরে আসুন এবং সীতাকুণ্ড হতে ঢাকার বাস ধরুন। সন্দ্বীপে একদিনের ভ্রমণে অবশ্যই দিনের ভেতর মূল ভূখণ্ডে ফেরত আসুন, শেষ স্পিড বোট ছাড়ার সময়সূচি জেনে তারপর ভ্রমণ করুন।

এছাড়া চট্টগ্রাম বা সীতাকুণ্ড ভ্রমণ করেও সন্দ্বীপকে ভ্রমণের তালিকায় রাখতে পারেন।

দর্শনীয় স্থান[সম্পাদনা]

  • কুমিরা স্টিমার ঘাটের আশেপাশে চোখে পড়বে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প। কুমিরা স্টিমার ঘাট ছেড়ে যাবার ও ফিরে আসার সময় চোখে পড়বে সীতাকুণ্ড রেঞ্জের পাহাড়গুলো।
  • সন্দ্বীপে মরিয়ম বিবি সাহেবানী মসজিদ।
  • সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটের প্রাকৃতিক পরিবেশ- ম্যানগ্রোভ বেষ্টনী।

এবং বিশেষভাবে সন্দ্বীপের পশ্চিম পাড়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ, সন্দ্বীপ ভ্রমণের বেশি সময় এখানেই অতিবাহিত করতে পারেন।

কোথায় থাকবেন[সম্পাদনা]

সন্দ্বীপের মূল শহর এলাকা এনাম-নাহার মোড়ে রয়েছে ২/১ টি হোটেল। এছাড়াও আরও এগিয়ে সেনেরহাট এলাকায় রয়েছে একটি উন্নত মানের হোটেল। এছাড়া অনুমতি নিয়ে থাকতে পারেন উপজেলা পরিষদের ডাক বাংলোতে (মাহমুদুর রহমান +৮৮০১৮১১৩৪১৭২২)।

খাওয়া দাওয়া[সম্পাদনা]

সেনেরহাটে, উপজেলা পরিষদের ডাক বাংলোর আশেপাশে মোটামুটি মানের কয়েকটি খাবার হোটল রয়েছে।

পরামর্শ[সম্পাদনা]

বোটে জলপথে ভ্রমণের সময় অবশ্যই বোটে রাখা লাইফ জ্যাকেট পরিধান করুন। অনেক সময় আবহাওয়ার কারণে নৌযান চলাচল বন্ধ থাকে। এজন্য হাতে বাড়তি একদিন সময় নিয়ে ভ্রমণ করতে চেষ্টা করুন।