24.7291.24
উইকিভ্রমণ থেকে
ছোট ছোট দ্বীপসহ একটি হাওর।
হাওর অববাহিকায়। দ্বীপে মোবাইল ফোন টাওয়ারটি লক্ষ্য করুন।
হাওর অববাহিকায় একটি পণ্যবাহী ট্রলার।

হাওর অববাহিকা বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট বিভাগে অবস্থিত। হাওর অববাহিকা বাংলাদেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় গ্রামীণ অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি।

অনুধাবন[সম্পাদনা]

হাওর বাংলাদেশের অনন্য জলাভূমি। হাওর পরিদর্শনের সর্বোত্তম সময় হলো বর্ষাকালের শেষের দিকে অর্থাৎ আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে, যখন সেগুলো জলে পূর্ণ থাকে। এরপর হাওরের পানি কমতে শুরু করলেও তা বিস্ময়কর দৃশ্য প্রদর্শন করে। পাখি পর্যবেক্ষকদের জন্য আদর্শ ঋতু হলো শীতকাল। কারন তখন হাওর-বিলে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি আসে। কিন্তু শীতকালের পরে হাওরগুলো আকারে ছোট হয়ে যায় এবং তাদের জলীয় জাঁকজমকতা হারায়।

ভূমি দৃশ্য[সম্পাদনা]

ভূমি থেকে চারদিকে শুধু জল আর জল দেখা যায়। বর্ষাকালে যখন প্রবল বাতাস থাকে তখন এখানে সমুদ্রের মতো ঢেউ ওঠে। গ্রামগুলো ছোট ছোট দ্বীপের মতো চারদিকে ভেসে বেড়ায়। নৌকা চলাচল, ছোট দ্বীপে গবাদি পশুর চরে বেড়ানো, জলে হাঁসের উপভোগ করা, কোথাও কোথাও বাঁশের বাজার বা জলের ধারে ইটভাটা - এগুলো থেকে মানুষের জীবনের আভাস খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। অনুকূল এবং পরিষ্কার আবহাওয়া সম্পন্ন দিনে যে কেউ দিগন্তের দিকে তাকালে উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয়ের গারো পাহাড়ের ক্ষীণ রূপরেখা দেখতে পাবে।

যাতায়াত[সম্পাদনা]

সুনামগঞ্জ-মোহনগঞ্জ এলাকার হাওরগুলোতে অন্যান্য হাওরগুলোর তুলনায় সহজে যাওয়া যায়। শুরুর স্থান হতে পারে সুনামগঞ্জ কিংবা মোহনগঞ্জ। সুনামগঞ্জ সিলেটের সাথে সড়কপথে সংযুক্ত এবং সিলেট ঢাকার সাথে ট্রেনের মাধ্যমে সংযুক্ত। মোহনগঞ্জ ঢাকার সাথে ট্রেন ও সড়কপথ উভয়ের মাধ্যমেই সংযুক্ত। ঢাকাময়মনসিংহের মধ্যে রেলযোগাযোগ তুলনামূলক ভালো হলেও ময়মনসিংহ ও মোহনগঞ্জের মধ্যে এটি নির্ভরযোগ্য নয়। তবে এখানে প্রচুর বাস রয়েছে। তারা মাঝে মাঝে ভিড় করলেও তা সহনীয় সীমার মধ্যে থাকে।

ঘুরে দেখুন[সম্পাদনা]

হাওর যখন পানিতে পূর্ণ থাকে, তখন একমাত্র পরিবহন হিসেবে লঞ্চ (এক ধরনের মোটরচালিত নৌযান) পাওয়া যায়। দেশীয় নৌযানগুলো ধীরগতির হয় এবং অত্যধিক বোঝাইয়ে সেগুলো অনিরাপদ হয়ে উঠতে পারে। মোহনগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মধ্যে একটি নিয়মিত লঞ্চ পরিষেবা (বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন লঞ্চ) রয়েছে, যেগুলো হাওর ছাড়াও কংসা ও সুরমা নদীর রাজকীয় দৃশ্যগুলো ঘুরিয়ে দেখায়। এগুলোতে ১২ ঘন্টার যাত্রার জন্য আরামদায়ক আসনের ব্যবস্থা রয়েছে (একমুখী), তবে নিজেদেরকে খাবার এবং জল বহন করতে হবে। বোর্ডে চা এবং বিস্কুট পাওয়া যায়। হাওর মৌসুমে বাষ্পীয় পোত পরিষেবা থাকে, তবে শুষ্ক মৌসুমে নদীতে কতটুকু পানি থাকে তার ওপর পরিষেবাটি নির্ভর করে।

ভ্রমণ খরচ দক্ষিণ এশিয়ার মান অনুসারে যুক্তিসঙ্গত এবং পশ্চিমা মান অনুসারে সস্তা।

কিছু লঞ্চের যোগাযোগ নম্বর:

  • লখিপুরের যুবরাজ - ০১৭১৮৬০০১৭৬
  • তমিজ তালুকদার - ০১৭১৭৩৪৯৫৫৩
  • লাল সাহেব - ০১৭১৯২৩১৬৭১
  • মাহফুজ - ০১৭১৭৩৪৯৫৫১

যারা হাওরের গভীরে যেতে চান তাদের লঞ্চ বা নৌকা ভাড়া করতে হবে। যা মোহনগঞ্জ, সুনামগঞ্জ বা সাচনায় পাওয়া যেতে পারে।

আহার[সম্পাদনা]

এটি একটি প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়ায় পর্যটকদের জন্য এখনও এটি বিকশিত করা হয়নি। দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য আপনার নিজের খাবার নিজে নিয়ে আসবেন। লঞ্চের ক্যান্টিনে শুধু চা ও বিস্কুট পাওয়া যায়। বিদেশী দর্শনার্থীদেরও বোতলজাত পানি বহন করে আনতে হবে।

পানীয়[সম্পাদনা]

এখানে অ্যালকোহল পাওয়া যায় না। কেউ অ্যালকোহল আনলেও তা প্রকাশ্যে পান করবেন না।

রাত্রিযাপন[সম্পাদনা]

মোহনগঞ্জে একটি ডাকবাংলো (সরকারিভাবে থাকার ব্যবস্থা) এবং প্রাথমিক সুবিধাসহ কিছু ছোট হোটেল রয়েছে। সুনামগঞ্জে হোটেল প্যালেস, হোটেল নূর, হোটেল নুরানী, হোটেল নাদিয়া, মধুমিতা, শামীমাবাদ, সেভেন স্টার, হোটেল রিজিয়া ইত্যাদি হোটেল রয়েছে। হোটেলগুলোতে শুধুমাত্র প্রাথমিক সুবিধাগুলো রয়েছে।

ক্যাম্পিং[সম্পাদনা]

চারিদিকে পানি থাকায় ক্যাম্প করার জায়গা খুবই স্বল্প বা নেই বললেই চলে। এছাড়া সাপ ক্যাম্পিং এর জন্য বিপদ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

লঞ্চ[সম্পাদনা]

লঞ্চের প্রথম শ্রেণীর আসনগুলো দক্ষিণ এশিয়ার বিলাসবহুল বা শৌখিন বাসগুলোর মতোই ভালো, তবে ইউরোপের বাস বা ট্রেনগুলোর সাথে এর তুলনা করা যায় না। এগুলো বসার জন্য খুবই আরামদায়ক তবে রাতের ভ্রমণের সময় ঘুমের জন্য আদর্শ নাও হতে পারে। লঞ্চগুলো দিনরাত যাতায়াত করে। দিনে গন্তব্যে যাত্রা শুরু করে এবং রাতে আবার আগের স্থানে ফিরে আসে।