অবয়ব
ইতিহাসের সাক্ষী ঢাকা সর্বপ্রথম রাজধানীর মর্যাদা পায় ১৬১০ সালে। ১৬০৮ সালে মোঘলদের প্রথম পদচরন দেখা যায় এই প্রাচীন নগরীতে। সুবেদার ইসলাম খান চিশতি সম্রাট জাহাংগীরের নামে এই নগরীর নামকরন করেন জাহাঙ্গীরনগর। বাংলার রাজধানী স্থানান্তরিত হয় জাহাঙ্গীরনগরে। মোঘল, ব্রিটিশ, পাকিস্তান আমল পার করে আজকের বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা আজও ধরে রেখেছে তার পুরান ঐতিহ্য। আজও অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা টিকে আছে কালের সাক্ষী হিসাবে। পুরান ঢাকার এই সব ঐতিহ্য আপনাকে নিয়ে যাবে ৪০০ বছর পিছনে।
কীভাবে যাবেন
[সম্পাদনা]পুরান ঢাকায় গণপরিবহনের অবকাঠামো খুব কম রয়েছে তাই সাইকেল বা রিকশা আপনার সেরা যানবাহন। জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বুড়ি গঙ্গা নদীর সদরঘাট নদী টার্মিনাল নদী পরিবহনের একটি বড় বন্দর এবং অন্যান্য শহর থেকে ঢাকায় পৌঁছানোর কার্যকর উপায় হতে পারে।
দেখুন
[সম্পাদনা]- 1 আহসান মঞ্জিল (বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত), ☎ +৮৮০ ২ ৭৩৯১১২২, ইমেইল: dgmuseum@yahoo.com। পুরান ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত এই স্থাপনাটি ঢাকার নবাবদের শেষ স্মৃতি বহন করছে। এর প্রতিষ্ঠাতা নবাব আব্দুল গনি পুত্র খাজা আহসানউল্লাহ'র নামনুসারে এর নাম রাখেন আহসান মঞ্জিল। এর নির্মাণকাল ১৮৫৯-১৮৭২ সাল। বর্তমানে এই ভবনটি জাদুঘর হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
- 2 হোসেনি দালান। ইমামবাড়া বা হোসেনি দালান শিয়া সম্প্রদয়ের একটি উপসনালয়। অনুমানিক ১৭শ শতকে সম্রাট শাহজাহান আমলে ভবনটি নির্মিত হয়। এর দেয়ালের শিলালিপি থেকে জানা যায় শাহ সুজার সুবেদারীর আমলে তার এক নৌ-সেনাপতি মীর মুরাদ দ্বারা হিজরি ১০৫২(১৬৪২খ্রিস্টাব্দ)নির্মিত হয়।ভবনটি মূলত কারাবালার প্রান্তরে ঈমাম হোসেনের শাহাদাৎ বরনের স্মরনে নির্মান করা হয়।
- 3 ঢাকেশ্বরী মন্দির। ৮০০ বছরের পুরান এই মন্দিরটি নির্মান করেন রাজা বল্লাল সেন। এইটি মূলত দূর্গা মন্দির। ঢাকার বৃহৎ যে কয়েকটি পূজা মণ্ডপ আছে ঢাকেশ্বরী মন্দির তার মধ্যে অন্যতম। জাতীয় এই মন্দিরের নামকরন হয় ঢাকার ঈশ্বরী অথাৎ ঢাকা শহরের রক্ষাকর্ত্রী দেবী হতে।
- 4 লালবাগের কেল্লা। মোগল আমলের ঐতিহাসিক স্থাপনাটি পুরান ঢাকার ঐতিহ্যময় স্থানের মধ্যে অন্যতম। সম্রাট আওরঙ্গজেবের ৩য় পুত্র আযম শাহ ১৬৭৮ সালে এর নির্মান কাজ শুরু করেন। কিন্তু দূ্র্গের কাজ হাত দেবার ১বছরের মাথায় মারাঠা বিদ্রোহ শুরু হয় আওরঙ্গজেব পুত্রকে দিল্লি ডেকে পাঠান।এরপর ১৬৮০ সালে অসম্পূর্ণ কাজে হাতে দেন সুবেদার শায়েস্তা খান। এর মধ্যে ১৬৮৪ সালে শায়েস্তা খানের কন্যা পরীবিবি মারা গেলে তিনি দুর্গ কে অপয়া মনে করে এর নির্মান কাজ স্থগিত করেন। এই পরীবিবিকে সমাহিত করা হয় দরবার হল ও মসজিদের ঠিক মাঝখানে উক্ত স্থান বর্তমানে পরিবিবির মাজার নামে পরিচিত। বর্তমান কেল্লা চত্বরে তিনটি স্থাপনা রয়েছে-কেন্দ্রস্থলের দরবার হল ও হাম্মাম খানা,পরীবিবির সমাধি,উত্তর পশ্চিমাংশের শাহী মসজিদ। এছাড়া দক্ষিণ-পূবাংশে কিছু সুদৃশ্য ফটক রয়েছে।
- 5 চকবাজার শাহী মসজিদ। সুবেদার শায়েস্তা খান ১৬৭৬ সালে এই মসজিদটি নির্মান করেন। বহুবার সংস্কারের ফলে এর আদিরুপটি না থাকলেও এর ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।
- 6 বড় কাটরা। শাহজাহান পুত্র শাহ সুজার নির্দেশে ১৬৪১খ্রিস্টাব্দে বড় কাটরা নির্মান করা হয়। বর্তমানে এই স্থাপনাটি বেহাল অবস্থা। বেশির ভাগ অংশই ভূমি দস্যুর দখলে। হোসাইনিয়া আশরাফুল উলুম মাদ্রাসা বর্তমানে এই বড় কাটরার তত্ত্বাবধানে আছে।
- 7 আর্মেনীয় গির্জা, ☎ +৮৮০ ২ ৭৩১ ৬৯৫৩। ১৭৮১ সালে নির্মিত চার্চটি ঢাকায় আর্মেনীয় সম্প্রদায়ের স্মৃতিচিহ্ন বহন করছে। অন্য সব ক্যাথলিক/ব্যাপ্টিস্ট চার্চ থেকে এই চার্চ সম্পূর্ণ আলাদা। এখনও আর্মেনীয়দের অবশিস্ট বংশধর এই চার্চের রক্ষনাবেক্ষন করছে। ঐতিহ্যবাহী এই চার্চের সাথে জড়িয়ে আছে ঢাকায় আর্মেনীয়দের ইতিহাস। অনুমানিক সপ্তদশ শতকের শুরুর দিকে দুই একজন করে আর্মেনীয় বণিক ঢাকায় আশা শুরু করে।ধারনা করা হয় তাদের নাম অনুসারে পুরান ঢাকার আরমানিটোলার নামকরন করা হয়। বিনামূল্য।
- 8 তারা মসজিদ। সুন্দর স্থাপত্য শিল্পটি শুধু মাত্র দেশি বিদেশি পর্যটকদের হৃদয়ে নয়, স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশের টাকায়। নয়ানিভিরাম স্থাপনাটি প্রচলিত ১০০টাকাত নোটে সচরাচর দেখা যায়। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ সরকার এই স্থাপনাটি কেন্দ্র করে ৫ থেকে ৫০০টাকা সিরিজের ব্যাংক নোট মুদ্রণ করে। পুরান ঢাকার আবুল খয়রাত সড়কে অবস্থিত স্থাপনাটি নির্মান করেন তৎকালীন ব্যবসায়ী জমিদার মির্জা গোলাম পীর। সাদা মার্বেলের গম্বুজের ওপর নীলরঙা তারায় খচিত এ মসজিদ নির্মিত হয় আঠারো শতকের প্রথম দিকে। মির্জা গোলাম পীরের মৃত্যুর পর ১৯২৬ সালে মসজিদটির প্রথমবারের মত সংস্কার করা হয়। আলী জান বেপারী নামক স্থানীয় ব্যবসায়ী মসজিদটির সংস্কার করেন। তখন এই মসজিদের মোজাইকের কারুকার্যে জাপানের রঙিন চিনি-টিকরি পদার্থ ব্যবহৃত হয়। মোগল স্থাপত্য শৈলীর প্রভাব রয়েছে এ মসজিদে। ১৯৮৭ সালে শেষবারের মত সংস্কারের সময় মসজিদটিকে তিন গম্বুজ থেকে পাঁচ গম্বুজ করা হয়।
- 9 কাস্বাবটুলী মসজিদ। ১৯০৭ সালে নির্মিত মসজিদটি পুরান ঢাকার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। মসজিদটি পুরাটাই নানা রং এর চিনা মাটির কাচ দ্বারা আবৃত। দেখতে অনেকটা চিনির টুকরার মত ঝকঝক। তাই এলাকাবাসী এই মসজিদকে চিনি মসজিদ বলেও ডাকে। ১৯৭৯ সালে মূল ভবনের কারুকাজের পরিবর্তন না করে এটি সংস্কার করা হয়। ফলে মূল ভবনের ভেতরটা আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। এই মসজিদের সুনাম আগে এতটাই ছিল বিটিভির আযানের সময় এই মসজিদের ছবি দেখানো হত।
- 10 লালকুঠি (নর্থব্রুক হল)। বাংলায় ঔপনেবেশিক আমলে নির্মিত ভবন গুলার মধ্যে লালকুঠি অন্যতম। তৎকালীন ভারতবর্ষের গর্ভনর জেনারেল লর্ড নর্থথব্রুক ১৮৭৪ সালে ঢাকা সফরে আসেন এবং তার এই আগমন কে স্মরনীয় করে রাখার জন্য ঢাকার প্রখ্যাত ধনীব্যক্তি জমিদার টাউন হল ধাচের একটি হল নির্মানের উদ্যোগ নেন। পরবর্তীতে এইটি নর্থব্রুক হল বা লাল কুঠি নামে পরিচিত হয়। লাল বর্ণের রং হওয়ায় স্থানীয় মানুষরা একে লাল কুঠি বলে ডাকে। ভবনটির নির্মানশৈলিতে ইন্দো ইসলামিক স্থাপত্য রীতির সঙ্গে ইউরোপীয়-রেনেসাঁ উত্তর স্থাপত্য রীতির চমৎকার মিশেল ঘটেছে। বর্তমানে এই স্থাপনাটি ঢাকা পৌরসভা কতৃত্ত্বভার গ্রহণ করেন।
- 11 ছোট কাটরা। সুবেদার শায়েস্তা খানের আমলে তৈরি ইমারতটি অনেকটা দেখতে বড় কাটরার মত। অনুমানিক ১৬৬৩-৬৪ সালে কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ১৬৭১এ। বর্তমানে ছোট কাটরা বলতে কিছু নেই। যা আছে ভাংগা ইমারত।
- 12 বেগম বাজার জামে মসজিদ (করতলব খান মসজিদ), বেগমবাজার, ঢাকা। ১৭০১-১৭০৪ সালের মধ্যে এই মসজিদটি নির্মাণ করেন এবং দেওয়ান মুর্শিদ কুলি খানের নামে এর নাম করণ করা হয়, তিনি কর্তালাব খান নামে পরিচিত ছিলেন। স্থানীয়রা মসজিদটিকে বেগমবাজার মসজিদ নামে চেনে।
- 13 খ্রিস্টান সমাধিক্ষেত্র (ঢাকা খ্রিস্টান কবরস্থান), ওয়ারী, পুরান ঢাকা।
পার্ক
[সম্পাদনা]- 14 বাহাদুর শাহ পার্ক (ভিক্টোরিয়া পার্ক)। পার্কের স্মৃতিসৌধটি চারটি পিলার এর উপর দাঁড়ানো চারকোনা একটি কাঠামো। উপরে রয়েছে একটি ডোম। অপর পাশে রয়েছে একটি ওবেলিস্ক, যা ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ও ভারতবর্ষের সম্রাজ্ঞী হিসেবে রানী ভিক্টোরিয়ার সিংহাসনে আরোহন মনে করিয়ে দেয়।
খাওয়া
[সম্পাদনা]- 1 বিসমিল্লাহ কাবাব, ১০৪ কাজী আলাউদ্দিন রোড (নাজিরা বাজারের পাশে)।
- 2 বুখারী হোটেল রেস্তোরাঁ, হাজী সাইফুদ্দিন মিলন স্কয়ার টাওয়ার, 72-73 কাজী আলাউদ্দিন রোড, ঢাকা। 6AM–5PM। ৳১২০।
- 3 হাজী বিরিয়ানী, ৭০ কাজী আলাউদ্দিন রোড, ঢাকা-১০০০, ☎ +৮৮০১৭১৫৮৩৩৫৭৭। ৳২০০।
- 4 স্টার কাবাব (সাত মসজিদ রোড)। কাবাবের জন্য বিখ্যাত
রাত্রিযাপন
[সম্পাদনা]- 1 হোটেল আল রাজ্জাক, ২৯/১ উত্তর দক্ষিণ (নাজিরা বাজার), ☎ +৮৮০ ২ ৯৫৬ ১৯৯০। বাংলাদেশীদের কাছে জনপ্রিয় একটি মাঝারি দামের হোটেল, এটিতে স্কোয়াট টয়লেট এবং একটি সংযুক্ত বাথরুমসহ একটি সুন্দর পরিষ্কার কক্ষ রয়েছে। ৳১৬০ থেকে শুরু।
- 2 হোটেল গ্রামীণ, ☎ +৮৮০ ২ ৯৫৬ ২৪২২। ৳৬০ থেকে শুরু।
- র্যাডিসন ঢাকা ওয়াটার গার্ডেন, বিমানবন্দর সড়ক, ☎ +৮৮০ ২৯৮৩৪৫৫৫, ইমেইল: sales.dhaka@radisson.com। আগমন: ০.০০, প্রস্থান: ২৩.৫৯।