ভারত (ইংরেজি: India; হিন্দি: भारत) দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম রাষ্ট্র। সুউচ্চ পর্বতমালা, অত্যন্ত জনবহুল শহর ও সুদীর্ঘ নদীর জন্য এই দেশ পরিচিত। এখানকার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সেকাল ও একালের মেলবন্ধন। সুবিশাল ও বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারতে বৈচিত্র্যের সীমা নেই। জাতি, ধর্ম, ভাষা, খাদ্য, পোশাক, স্থাপত্য, সব ব্যাপারেই বৈচিত্র্য রয়েছে এই দেশে। এখানকার শতাব্দী-প্রাচীন স্থাপত্যকলা আজও একইরকম রয়ে গিয়েছে। বিশ্বায়নের কবলে পড়া বিশ্বে এধরনের দেশ পাওয়া সহজ নয় এবং এখানকার সুদীর্ঘ ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যেকোনো ভ্রমণকারীকে বিস্মিত ও মুগ্ধ করে।
অঞ্চল
[সম্পাদনা]প্রশাসনিকভাবে ভারত ২৮টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত এবং ভাষার ভিত্তিতে এই রাজ্যগুলোর সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। ভারতের রাজ্যগুলোর আকার ভিন্ন; বড় রাজ্যগুলো আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশের চেয়ে বড় ও বৈচিত্র্যপূর্ণ। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলো রাজ্যের তুলনায় সাধারণত অনেক ছোট হয়, কিছুক্ষেত্রে কেবল একটি শহর নিয়ে গঠিত এবং এদের স্বায়ত্বশাসন সীমিত। দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দুটি দ্বীপপুঞ্জ রয়েছে: বঙ্গোপসাগরে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এবং আরব সাগরে লাক্ষাদ্বীপ।
উইকিভ্রমণে ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোকে নিম্নলিখিত অঞ্চলে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে:
হিমালয় উত্তর (জম্মু ও কাশ্মীর, লাদাখ, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড) পর্বতময় ও সুন্দর জায়গা, ভ্রমণপিপাসু ও আধ্যাত্মিকদের পছন্দের গন্তব্য। এই অঞ্চলে ভারতের অন্যতম আকর্ষণীয় শৈলশহর ও পীঠস্থান রয়েছে। |
গাঙ্গেয় সমভূমি (উত্তরপ্রদেশ, চণ্ডীগড়, দিল্লি, পাঞ্জাব, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা) ভারতের শস্যভাণ্ডার বলে পরিচিত এই অঞ্চলের উপর দিয়ে পবিত্র গঙ্গা ও যমুনা নদী এবং তাদের উপনদী গিয়েছে। এই অঞ্চলে জাতীয় রাজধানী দিল্লি, তাজমহলের নগরী আগ্রা এবং পবিত্র নগরী মথুরা, প্রয়াগরাজ, বারাণসী ও গয়া-বোধগয়া রয়েছে। |
পশ্চিম ভারত (দাদরা ও নগর হাভেলি এবং দমন ও দিউ, গুজরাত, গোয়া, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান) সুবিশাল থর মরুভূমি, রাজস্থানের রঙিন প্রাসাদ ও দুর্গ, দেশের বাণিজ্য নগরী মুম্বই, অজন্তা-ইলোরার মনোমুগ্ধকর গুহা, শান্ত বনজঙ্গল, গোয়ার চিত্তাকর্ষক সৈকত, গুজরাতের গির অরণ্যের সিংহ এবং দ্রুত বর্ধনশীল আহমেদাবাদ, সুরত, জয়পুর ও পুণে শহর এই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য। |
দক্ষিণ ভারত (অন্ধ্রপ্রদেশ, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, কর্ণাটক, কেরল, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা, পুদুচেরি) বিখ্যাত ও ঐতিহাসিক মন্দির, ক্রান্তীয় অরণ্য, সুবিশাল হ্রদে নৌকাবিহার, সৈকত, শৈলশহর এবং চেন্নাই, বেঙ্গালুরু ও হায়দ্রাবাদ মহানগর এই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য। মহীশূর নগর তার প্রাসাদের জন্য জগদ্বিখ্যাত, বিশেষ করে মহীশূর প্রাসাদ। মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন আন্দামান ও নিকোবর এবং লাক্ষাদ্বীপের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। |
পূর্ব ভারত (ওড়িশা, ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম) অন্যান্য অঞ্চলের মতো উন্নত নয়, কিন্তু এর সংস্কৃতি যথেষ্ট সমৃদ্ধ। আনন্দনগরী কলকাতা, শিল্পনগরী আসানসোল ও জামশেদপুর, শৈলশহর গ্যাংটক ও দার্জিলিং এবং মন্দির নগরী কোণার্ক, পুরী ও ভুবনেশ্বর এই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য। এই অঞ্চল পর্বত থেকে সমুদ্র অবধি বিস্তৃত, যার ফলে জলবায়ুর যথেষ্ট বৈচিত্র্য রয়েছে। |
উত্তর-পূর্ব ভারত (অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, মেঘালয়) মূল ভূখণ্ড থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন এই অঞ্চল আদিবাসী সংস্কৃতি, বন্ধুর ভূমিরূপ, স্থানীয় উদ্ভিদ ও প্রাণিজগৎ এবং বিখ্যাত চা বাগানের জন্য পরিচিত। কেবল মণিপুরেই বিশ্বের প্রাচীনতম পোলো মাঠ, বিশ্বের একমাত্র ভাসমান জাতীয় উদ্যান, বিশ্বের একমাত্র মাতৃতান্ত্রিক বাজার ইত্যাদি রয়েছে। এছাড়া মেঘালয় তার মনোমুগ্ধকর ভূমিরূপের জন্য "ভারতের স্কটল্যান্ড" নামে পরিচিত। |
শহর
[সম্পাদনা]নিচে ভারতের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য শহরের নাম দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চল নিবন্ধে আরও উল্লেখযোগ্য শহর পাওয়া যাবে।
- 1 দিল্লি — ভারতের জাতীয় রাজধানী ও উত্তর ভারতের কেন্দ্রস্থল।
- 2 কলকাতা — ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী, বাংলার নবজাগরণের কেন্দ্র, ইংরেজ আমলের স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত।
- 3 চেন্নাই — দক্ষিণ ভারতের মূল বন্দর, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও মোটরগাড়ির নগরী।
- 4 জয়পুর — গোলাপি শহর, মধ্যযুগীয় উত্তর ভারতের রাজপুত আমলের আকর্ষণের জন্য পরিচিত।
- 5 বারাণসী — গঙ্গাতীরে পবিত্রতম হিন্দু শহর, বিশ্বের প্রাচীনতম নিরবিচ্ছিন্নভাবে বসবাসকারী শহরের মধ্যে অন্যতম।
- 6 বেঙ্গালুরু — সুন্দর উদ্যান নগরী, একদা অবসরপ্রাপ্তদের সময় কাটানো গন্তব্য ছিল। বর্তমানে এটি ভারতের অন্যতম তথ্য প্রযুক্তি (আইটি) কেন্দ্র।
- 7 মুম্বই — ভারতের বাণিজ্য নগরী, বলিউডের প্রাণকেন্দ্র, ইংরেজ আমলের আকর্ষণীয় স্থাপত্যের জন্য পরিচিত।
- 8 শিমলা — হিমাচল প্রদেশের শীতকালীন রাজধানী, টয় ট্রেন ও হিমালয় পর্বতমালার সৌন্দর্য্যের জন্য পরিচিত।
- 9 হায়দ্রাবাদ — নিজামের শহর, মুক্তা ও হীরার ব্যবসা এবং বিখ্যাত বিরিয়ানির জন্য পরিচিত।
জানুন
[সম্পাদনা]অন্য দেশ থেকে আগত লোকদের এটা জানা উচিত যে ভারত বিভিন্ন ব্যাপারে বৈচিত্র্যপূর্ণ, অর্থাৎ আপনি এই দেশের কোনো এক জায়গায় স্থানীয়দের কাছে যা আচরণ পাবেন, তার মানে এই নয় যে আপনি অন্য জায়গায় একইরকম আচরণ পাবেন। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণ করার জন্য ধৈর্য ও ভাগ্যের প্রয়োজন, আর কোনোভাবেই মনে করবেন না যে আপনি ভারতের সবকিছু জানেন; প্রতিদিন নতুন চমকের জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকুন।
রাজনীতি
[সম্পাদনা]বাংলাদেশের মতো ভারতও একটি সংসদীয় প্রজাতন্ত্র ও গণতন্ত্র। রাষ্ট্রপতি ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান হলেও তাঁর ক্ষমতা সীমিত। প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিসভা সরকার পরিচালনা করে। ভারতীয় সংসদ দুই কক্ষ নিয়ে গঠিত। নিম্নকক্ষ লোকসভা সরাসরি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত কিন্তু উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত। এর মধ্যে লোকসভা বেশি ক্ষমতাশালী, কারণ সরকার গঠন ও বাজেট অনুমোদনের জন্য লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন এবং প্রথা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী লোকসভার সদস্য। ভারত যেন রাজনৈতিক দলের অরণ্য। হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকার গঠন করে এবং মধ্যবামপন্থী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (বা শুধু "কংগ্রেস") এর প্রধান বিরোধী দল। ভারতের স্বাধীন ও শক্তিশালী বিচার ব্যবস্থা এবং স্বাধীন গণমাধ্যম রয়েছে।
ভারত বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের একটি সংঘ, এবং প্রত্যেক রাজ্যেরই নিজস্ব আইনসভা, মন্ত্রিসভা ও বিচার বিভাগ রয়েছে।
যেকোনো গণতন্ত্রের মতোই ভারতের রাস্তায় প্রতিবাদ, ধর্মঘট, মিছিল ইত্যাদি হয়। এছাড়া মূলত পশ্চিমবঙ্গ ও কেরল রাজ্যে রাজনৈতিক হিংসাকাণ্ড দেখতে পাওয়া যায়, এবং পর্যটকদের সেখান থেকে বিরত থাকাই ভালো।
সময় অঞ্চল
[সম্পাদনা]ভারতীয় প্রমাণ সময় (আইএসটি) সর্বজনীন সমন্বিত সময় (ইউটিসি) থেকে ৫ ঘণ্টা ৩০ মিনিট এগিয়ে এবং বাংলাদেশ মান সময় (বিএসটি) থেকে ৩০ মিনিট পিছিয়ে। গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন সময় একই।
ভাষা
[সম্পাদনা]কেন্দ্রীয় স্তরে হিন্দি ও ইংরেজি ভারতের সরকারি ভাষা। ভারতের বেশিরভাগ জনগণ বহুভাষিক এবং অনেকেই একের বেশি ভাষা ব্যবহার করেন।
ভারতের জনসংখ্যার প্রায় ৪০–৫০% হিন্দি ভাষায় কথা বলেন এবং এটি উত্তর ও মধ্য ভারতের সাধারণ ভাষা হিসাবে কাজ করে। তবে দেশের ভাষাগত বৈচিত্র্যের জন্য জাতীয় স্তরে হিন্দি ভাষার ব্যবহার অনেকসময় বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। দক্ষিণ ও উত্তর-পূর্ব ভারতে হিন্দি তেমন প্রচলিত নয়।
ইংরেজি ভাষা মূলত শহরের মধ্যে প্রচলিত এবং এটি শিক্ষা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাথমিক ভাষা। এটি সমগ্র দেশের সাধারণ ভাষা হিসাবে কাজ করে। ইংরেজি ভাষা জানা থাকলে আপনি ভারতের বহু জায়গায় ভ্রমণ করতে পারবেন। তবে এই দেশে বেশিক্ষণ থাকার জন্য এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথাবার্তা বলার জন্য সেখানকার স্থানীয় ভাষা শেখা উচিত।
ভারতের আঞ্চলিক সরকারি ভাষার মধ্যে বাংলা, অসমীয়া, উর্দু, ওড়িয়া, কন্নড়, গুজরাটি, তামিল, তেলুগু, পাঞ্জাবি, মারাঠি, সংস্কৃত ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
ভারতে বাংলা ভাষা মূলত পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসামের বরাক উপত্যকায় প্রচলিত। তবে ওড়িশার অনেক স্থানীয় বাংলা ভাষা বুঝতে পারেন এবং ভারতের অনেক বাঙালি ছুটি কাটানোর জন্য ওড়িশায় যান।
প্রবেশ
[সম্পাদনা]ভিসা-সম্পর্কিত বিধিনিষেধ:
ভারতের কিছু রাজ্যে ভ্রমণের জন্য অনুমতিপত্রের প্রয়োজন। আফগানিস্তান, চীন, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের নাগরিক ও প্রাক্তন নাগরিকরা সাধারণত এই অনুমতিপত্রের যোগ্য নন। আপনাকে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে বিশেষ অনুমতি নিতে হবে।
এইসব এলাকায় ভ্রমণ করার পরিকল্পনা থাকলে ভারতীয় ভিসার আবেদন করার সময় আপনাকে উপযুক্ত অনুমতিপত্র আবেদন করতে হবে এবং যাচাই করা হলে অনুমতিপত্রকে আপনার ভিসার সঙ্গে যোগ করা হবে। তবে এটি সহজে প্রাপ্য ইটিএ বা ই-ভিসার ক্ষেত্রে সম্ভব নয়, কেবল সাধারণ ভিসার ক্ষেত্রেই সম্ভব। |
ভিসা
[সম্পাদনা]নাগরিকত্বের উপর ভিত্তি করে ভিসার নিয়ম এবং বৈধতা ভিন্ন হয়ে থাকে। নেপাল ও ভুটানের নাগরিকরা ভিসা ছাড়া অনির্দিষ্টকালের জন্য ভারতে প্রবেশ করতে এবং বসবাস করতে পারেন।
আকাশপথে
[সম্পাদনা]আকাশপথে কলকাতা (CCU আইএটিএ), চেন্নাই (MAA আইএটিএ), দিল্লি (DEL আইএটিএ), বেঙ্গালুরু (BLR আইএটিএ), মুম্বই (BOM আইএটিএ) ও হায়দ্রাবাদ (HYD আইএটিএ) ভারতের প্রধান প্রবেশ বিন্দু। এই শহরগুলোর বিমানবন্দর হয় নতুন, না হয় উন্নয়নের অধীন। আফ্রিকা, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, ওশেনিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে এইসব শহরে অনেক সরাসরি উড়ান পরিষেবা রয়েছে।
রেলপথে
[সম্পাদনা]বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তিনটি রেল পরিষেবা রয়েছে; যেমন মৈত্রী এক্সপ্রেস (ঢাকা–কলকাতা), বন্ধন এক্সপ্রেস (খুলনা–কলকাতা) ও মিতালী এক্সপ্রেস (ঢাকা–নিউ জলপাইগুড়ি)।
সড়কপথে
[সম্পাদনা]বাংলাদেশ থেকে
[সম্পাদনা]সড়কপথে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়ার বিভিন্ন প্রবেশ বিন্দু রয়েছে। এর মধ্যে বেনাপোল চেকপোস্টের মাধ্যমে ঢাকা থেকে কলকাতা যাওয়ার শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত ও আরামদায়ক বাস পরিষেবা সবচেয়ে প্রচলিত উপায়।
বেনাপোল চেকপোস্ট
[সম্পাদনা]- আরও দেখুন: বেনাপোল।
ঘুরে দেখুন
[সম্পাদনা]ভারত এক সুবিশাল দেশ এবং এখানে চারিদিকে ঘুরে বেড়ানোর বিভিন্ন উপায় আছে। তবে উত্তর-পূর্বের বেশিরভাগ অঞ্চল (আসাম ব্যতীত), আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, সিকিম এবং উত্তরাখণ্ড, জম্মু ও কাশ্মীর, রাজস্থান, লাক্ষাদ্বীপ, লাদাখ ও হিমাচল প্রদেশের কিছু জায়গায় ভ্রমণ করার জন্য প্রটেক্টেড এরিয়া পারমিট (পিএপি) বা ইনার লাইন পারমিটের (আইএলপি) প্রয়োজন, নিচে দেখুন। তবে সাধারণ ভিসা আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে এই অনুমতিপত্রগুলো পাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে ভারতীয় ভিসা আবেদন করার সময় সেই অনুমতিপত্রগুলোর আবেদন করা এবং এগুলো আপনার ভিসার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাবে, যা ইটিএ বা ই-ভিসার ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। নাহলে আপনাকে স্থানীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যালয়ে (অর্থাৎ জেলাশাসক কার্যালয়) যেতে হবে এবং আমলাতন্ত্রের ফাঁদে পড়ে থাকতে হবে। অনেকসময় ভ্রমণ সংস্থা এই অনুমতিপত্রগুলোর ব্যবস্থা করে দেবে, তবে তাদের সঙ্গে ভ্রমণ বুক করা শর্তসাপেক্ষ। ভারতীয় নাগরিকরা অনলাইনে এইসব আবেদনপত্রের আবেদন করতে পারেন।
আকাশপথে
[সম্পাদনা]ভারতের সুবিশাল আকার ও অনিয়ন্ত্রিত রাস্তাঘাটের জন্য আকাশপথে ভ্রমণ করা এক ভালো উপায়, বিশেষ করে বিমানের ভাড়া গত কয়েক বছরে কমে এসেছে। এমনকি ভারতের সবচেয়ে দূরবর্তী পাহাড় ও দ্বীপেও বিমান পরিষেবা রয়েছে। গত কয়েক বছরের বিমানচালনা বিপ্লবের জন্য বিমানবন্দরগুলো এত বিমান নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। ভারতের বেশিরভাগ বিমানবন্দরে কেবল একটি রানওয়ে ও কয়েকটি বোর্ডিং গেট রয়েছে। বিশেষ করে দিল্লি ও মুম্বইতে চেক-ইন ও নিরাপত্তা লাইন অনেক লম্বা হতে পারে। বেঙ্গালুরু ও হায়দ্রাবাদের বিমানবন্দরে অত্যাধুনিক পরিষেবা রয়েছে। দিল্লি বিমানবন্দরের টার্মিনাল ৩ বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম টার্মিনাল।
উত্তর ভারতে, বিশেষ করে দিল্লিতে বড়দিন ও জানুয়ারির সময়কার ধোঁয়াশা বিমান পরিষেবায় বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে গন্তব্যে পৌঁছতে প্রচণ্ড দেরি হতে পারে। আকাশপথে সমভূমি থেকে পাহাড়ে পৌঁছনো (যেমন দিল্লি থেকে লেহ) সাধারণত ঝুঁকিপূর্ণ হয়।
রেলপথে
[সম্পাদনা]- আরও দেখুন: ভারতে রেল ভ্রমণ
দেখুন
[সম্পাদনা]ভারতের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান ঘুরতে গেলে এমনকি ৬ মাসের পরিকল্পনাও যথেষ্ট নয়। সারসংক্ষেপ তো দূর, একটা সম্পূর্ণ বইয়ের মাধ্যমেও ভারতের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থানকে তুলে ধরা যায় না। প্রায় প্রত্যেকটি রাজ্যে দশের অধিক দর্শনীয় স্থান রয়েছে, এবং সেখানে এমন এমন শহর আছে যা এক সপ্তাহের মধ্যেও উপভোগ করা যায় না। দেশটা ঘুরলে মনে হবে যে ভারত একক রাষ্ট্র নয়, বরং একাধিক পৃথক পৃথক রাষ্ট্রের সমাহার। উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্য বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রের চেয়েও জনবহুল।
যাইহোক, নিচে ভারতের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থানের উল্লেখ করা হয়েছে।
ঐতিহাসিক স্থাপত্য
[সম্পাদনা]সম্ভবত আগ্রার তাজমহল ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় আকর্ষণ এবং এটি ভারতের ইসলামি শিল্পকলার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হিসাবে বিবেচিত। এছাড়া এটি "বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্য" হিসাবেও পরিচিত।
কুতুব মিনার ও লালকেল্লা দিল্লির দুই সবচেয়ে বিখ্যাত ঐতিহাসিক স্থাপত্য।
রাজস্থানের রাজধানী জয়পুর "গোলাপি শহর" নামে পরিচিত এবং এখানে একাধিক প্রাসাদ ও দুর্গ রয়েছে, যেমন আমের দুর্গ, জলমহল ও হাওয়ামহল।
বিহারের নালন্দা ও বিক্রমশিলায় প্রাচীন বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়, যা তৎকালীন ভারতবর্ষে উচ্চশিক্ষার প্রতীক।
একটু অন্যরকম ও আরও আধুনিক ধরনের ঐতিহাসিক স্থাপত্যের জন্য আপনি আহমেদাবাদের গান্ধী আশ্রমে ঢুঁ মারতে পারেন, যা মহাত্মা গান্ধী নিজে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং সেখানে গান্ধী সম্পর্কিত সবকিছু রয়েছে।
ধর্মস্থান
[সম্পাদনা]ভারতের আকর্ষণীয় মন্দিরগুলো ভ্রমণ না করলে দেশ ভ্রমণ সম্পূর্ণ হবে না। দেশের প্রত্যেক এলাকা মন্দিরে পরিপূর্ণ। দেশে এমন এমন শহর রয়েছে যা মন্দিরে পরিপূর্ণ বা মন্দিরের জন্য পরিচিত এবং এগুলো "মন্দির নগরী" নামে পরিচিত। ভারতের উল্লেখযোগ্য মন্দির নগরীর মধ্যে অম্বিকা কালনা, জম্মু, তিরুপতি, বারাণসী, বিষ্ণুপুর ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে বিষ্ণুপুর পোড়ামাটির মন্দিরের জন্য বিখ্যাত। বারাণসীর কাশী বিশ্বনাথ মন্দির (শিবমন্দির) ও তিরুপতির বেঙ্কটেশ্বর মন্দির (বিষ্ণু মন্দির) দেশের গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু তীর্থস্থানের মধ্যে অন্যতম, এবং সেখানে হিন্দু ব্যতীত অন্যের প্রবেশাধিকার নেই। মধ্যপ্রদেশের খাজুরাহো মন্দির চত্বর হাজার বছর পুরনো মন্দিরের দেওয়ালের নকশার জন্য বিখ্যাত। এছাড়া তামিলনাড়ুর চোল যুগের মন্দিরগুলো বিশ্ব ঐতিহ্য হিসাবে চিহ্নিত।
হিন্দুধর্মের পর ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম হচ্ছে ইসলাম এবং মুসলিম শাসকরা কয়েকশো বছর ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় শাসন করে গিয়েছে। যার ফলে আপনি মন্দিরের পাশাপাশি ভারতের বিভিন্ন জায়গায় চিত্তাকর্ষক মসজিদও দেখতে পাবেন। এর মধ্যে দিল্লির সুবিশাল জামে মসজিদের নাম উল্লেখযোগ্য, যা সপ্তদশ শতাব্দী থেকে নিয়মিত ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। এছাড়া দক্ষিণ ভারতের হায়দ্রাবাদে ঐতিহাসিক চারমিনার ও মক্কা মসজিদ রয়েছে।
মসজিদ ও হিন্দু মন্দির ছাড়াও পাঞ্জাবের অমৃতসরে শিখধর্মের সদর স্বর্ণ মন্দির রয়েছে। লাদাখের লেহ ও তার আশেপাশের জায়গায় একাধিক চিত্তাকর্ষক বৌদ্ধ মন্দির ও মঠ রয়েছে।
ভৌগোলিক আকর্ষণ
[সম্পাদনা]ভারতের ভৌগোলিক বৈচিত্র্য বিশ্বের খুব কম দেশেই আছে। দেশের উত্তরে রয়েছে হিমালয় পর্বতমালা, পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশ্রেণী। এছাড়া হিমালয় থেকে দূরবর্তী অনেক রাজ্যে পাহাড়ি এলাকা রয়েছে। ভারতের বিভিন্ন পাহাড়-পর্বতে শৈলশহর রয়েছে, যারা নিজেরাই এক একটি আকর্ষণ। একদা রাজা-মহারাজা, পরে ইংরেজরা এবং এখন গরমের সময় পর্যটকদের কাছে এই শৈলশহরগুলো বিখ্যাত। এদের মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগর বৃহত্তম এবং পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং চা বাগান, টয়ট্রেন, ঐতিহাসিক ভবন ইত্যাদির জন্য বিখ্যাত। এছাড়া উটি, গ্যাংটক ও শিমলা অন্যান্য উল্লেখযোগ্য শৈলশহরের উদাহরণ।
ভারত "নদীমাতৃক দেশ" হিসাবে যথেষ্ট খ্যাতিলাভ করেছে। ভারতের বিভিন্ন নদীর মধ্যে কিছু নদীকে পবিত্র হিসাবে মনে করে হয়, কিন্তু এর মধ্যে গঙ্গা নদী কেবল পবিত্র জলধারাই নয়, বরং এটি ভারতের শস্যভাণ্ডার গাঙ্গেয় সমভূমির মেরুদণ্ড এবং ধার্মিক স্নান, আরতি ও অন্ত্যেষ্টির কেন্দ্র।