উইকিভ্রমণ থেকে

কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের একটি দর্শনীয় স্থান, যা পটুয়াখালী জেলার অন্তর্গত। এটি দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে স্থাপিত যা রাজধানী ঢাকা হতে প্রায় ৩৫০ কিঃ মিঃ দক্ষিণ দিকে অবস্থিত এবং জাতীয় উদ্যান হিসাবে ঘোষিত হয় ২০১০ সালে। এই সংরক্ষিত জাতীয় উদ্যানের আয়তন ১,৬১৩ হেক্টর (৩,৯৯০ একর)।

বিশেষত্ব[সম্পাদনা]

কুয়াকাটা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি সমুদ্র সৈকত ও পর্যটনকেন্দ্র যা পর্যটকদের নিকট “সাগর কন্যা” নামে পরিচিত। ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সৈকত বিশিষ্ট কুয়াকাটা বাংলাদেশের অন্যতম নৈসর্গিক ও একমাত্র সমুদ্র সৈকত যেখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়। এর অদূরেই বাংলাদেশ বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে গড়ে তোলা হয়েছে জাতীয় উদ্যানটি। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটার জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার পূর্বে এর অবস্থান। সাগর থেকে এর দূরত্ব মাত্র ২৫/৩০ গজ।

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বরে সিডর এবং পরবর্তীতে আইলার কারণে এর ব্যাপক ক্ষতি হয়। উদ্ভিদ, বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ এবং পর্যটন-সুবিধা উন্নয়নের উদ্দেশ্যে একে জাতীয় উদ্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়।

শকুনের নিরাপদ এলাকা-২ তফসিল অনুসারে কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান শকুনের জন্য নিরাপদ বলে ঘোষিত।

কীভাবে যাবেন[সম্পাদনা]

ঢাকা থেকে সকাল সন্ধ্যা যেকোন সময় বেশ কয়েকটি বাস সরাসরি কুয়াকাটা যায়। ঢাকার গাবতলী থেকে সুরভী, সোনারতরী, সাকুরা পরিবহন ছাড়াও বিআরটিসি পরিবহনের বাস সরাসরি কুয়াকাটায় যায়। এসব বাস কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে ২০০ মিটার দূরে নামিয়ে দেয়। ঢাকা থেকে কুয়াকাটা বাসে যেতে মোট সময় লাগে প্রায় ১২/১৩ ঘণ্টা; মোটামুটি ৯-১০ ঘণ্টা লাগে বাসে যেতে এবং দুটি ফেরী পার হতে হয়। ভাড়া সুরভীতে শুধুমাত্র ৭৫০ বাকিগুলোতে ৬৫০।

সরাসরি কুয়াকাটা যাওয়ার কোনো ট্রেন নেই; পুরো বরিশাল বিভাগেই ট্রেনে যাওয়া যায় না। ট্রেনে ঢাকা সুন্দরবন এক্সপ্রেস বা চিত্রা এক্সপ্রেসে, আর উত্তরবঙ্গের সৈয়দপুর থেকে রূপসা অথবা সীমান্ত আন্তঃনগর ট্রেনে করে খুলনা আসতে হবে। খুলনা থেকে কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে সকাল ৭ টায় একটি বিআরটিসি বাস ছেড়ে যায়; তাতে সময় লাগে প্রায় ৭/৮ ঘণ্টা এবং ভাড়া লাগে ২৭০ টাকা।

উপকূলীয় এবং নদীবহুল এলাকা হওয়ায় লঞ্চে যাতায়ত করা সবচেয়ে সহজ ও আরামদায়ক। লঞ্চে ঢাকা থেকে বরিশাল, আমতলী বা পটুয়াখালি হয়ে কুয়াকাটা যাওয়া যায়। ঢাকার সদরঘাট থেকে প্রতিদিন বিকাল ৫.৩০ থেকে ৬.৩০ টার মধ্যে এমভি কাজল-৭, এমভি প্রিন্স আওলাদ-৭, এমভি সুন্দরবন-৯ ও ১১, এমভি জামাল-৫, এমভি এ আর খান-১, এমভি সাত্তার খান-১, এমভি কুয়াকাটা-১, এমভি মাহিন রিফাত-১ লঞ্চগুলোর যেকোনো ৩টি পটুয়াখালীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় ও সেগুলো পটুয়াখালী পৌছায় সকাল ৭ টার দিকে। এছাড়াও কিছু লোকাল লঞ্চ; যেমন মাহিন রিফাত-১, প্রিন্স অব রাসেল-৪, সৈকত-১৫'এ সময়ও কিছুটা বেশি লাগে।

লঞ্চ থেকে পটুয়াখালী নেমে রিক্সা নিয়ে বাস স্ট্যান্ডে এসে সেখান থেকে বাসে কুয়াকাটা যেতে হবে। তবে, সন্ধ্যা ৫টার পর আর কোনো বাস পটুয়াখালী থেকে কুয়াকাটা যায় না। পটুয়াখালী হতে বাসে বাদে মোটর সাইকেলেও যাওয়া যায় কুয়াকাটায়; চৌরাস্তা হতে এক মোটর সাইকেলে ২ জন করে যাত্রী নিয়ে এসব যান চলাচল করে থাকে, যাতে সময় লাগে আড়াই ঘণ্টা।

আমতলী হয়েও যেতে পারেন; ঢাকা সদরঘাট হতে প্রতিদিন এমভি সুন্দরবন-৫, এমভি প্রিন্স অব হাসান হোসেন-১, এমভি ইয়াদ-এর মধ্যে একটি লঞ্চ বিকাল ৪.৩০ হতে ৫.০০ টার মধ্যে আমতলীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। আমতলী নেমে বরিশাল থেকে কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা বাসে করে যেতে হবে।

ঢাকা থেকে লঞ্চে বরিশাল এসে সেখান থেকে বাসে কুয়াকাটা যাওয়া যায়। ঢাকা হতে বরিশালের সুন্দরবন, সুরভী, পারাবর, কীর্তনখোলা লঞ্চগুলো রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে সদর ঘাট থেকে ছাড়ে ও বরিশাল পৌঁছায় ভোর সাড়ে ৪টার দিকে। বরিশাল পৌছে সেখান থেকে মাইক্রোবাস ভাড়া করে সরাসরি কুয়াকাটা পৌঁছানো যায়। বরিশাল থেকে লোকাল বাসে কুয়াকাটা যাওয়া যায়; এপথে ৪টি ফেরি রয়েছে। অথবা, বরিশাল থেকে আগে আমতলী এসে তারপর সেখান থেকে আবার বরিশাল থেকে ছেড়ে আসা লোকাল বাসে কুয়াকাটা যাওয়া যাবে।

ঘুরে দেখুন[সম্পাদনা]

নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে বেড়াতে পারেন; এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো হলো -

  1. কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত;
  2. কেরানীপাড়ার পুরানো বৌদ্ধবিহারে গৌতম বুদ্ধের ধ্যানমগ্ন মূর্তি (এটি এশিয়ার সর্ববৃহৎ বুদ্ধমূর্তি);
  3. কুয়াকাটা বৌদ্ধবিহার;
  4. পীর বশির উদ্দিনের মাযার;
  5. মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ বিহার;
  6. লালকাকড়ার দ্বীপ;
  7. কাছিমখালী গ্রামের মাটির কেল্লা।

কোথায় থাকবেন[সম্পাদনা]

কলাপাড়ায় থাকার জন্য স্থানীয় পর্যায়ের কিছু সাধারণ মানের হোটেল রয়েছে। এছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় থাকার জন্যে রয়েছে উন্নতমানের -

  • জেলা পরিষদ ডাকবাংলো - কলাপাড়া।
  • হোটেল বনানী প্যালেস - কুয়াকাটা পর্যটন এলাকা, কলাপাড়া; মোবাইল: ০১৭১৩-৬৭৪ ১৮৯।
  • হোটেল কুয়াকাটা ইন - কুয়াকাটা পর্যটন এলাকা, কলাপাড়া; মোবাইল: ০১৭৫০০০৮১৭৭।
  • হোটেল নীলাঞ্জনা - রাখাইন মার্কেটের অপজিটে, কুয়াকাটা পর্যটন এলাকা, কলাপাড়া; ফোনঃ- +৮৮ ০৪৪২৮৫৬০১৪, ১৫৬০১৮, মোবাইল:- ০১৭১২৯২৭৯০৪, ০১৭১২৯২৭৯০৪।
  • কুয়াকাটা গেস্ট হাউজ - কুয়াকাটা পর্যটন এলাকা, কলাপাড়া, কলাপাড়া; মোবাইল: ০১৭৩০১৮৯১৫২।
  • হোটেল স্কাই প্যালেস - কুয়াকাটা পর্যটন এলাকা, কলাপাড়া; ফোনঃ +৮৮ ০৪৪২৮৫৬০২৬-৭, মোবাইল:- ০১৮২৩-৬০৭৩. ০১৭২৭-৫০৭৪৭৯. ০১৯১৫২২৯৯২৩. ঢাকা অফিস: ০১৭১১-৫৪২৮৮১, ০১৭৩২-৯৬৬২৮৮, ০১৭২৭-৫০৭৪৭৯।
  • হোটেল মোহনা ইন্টারন্যাশনাল লিঃ - কুয়াকাটা পর্যটন এলাকা, কলাপাড়া; ফোনঃ- +৮৮ ০৪৪২৮-৫৬১৭৫. ফ্যাক্সঃ- +৮৮ ০৪৪২৮ ৫৬১৭৬. মোবাইল:- ০১৭৫০০৯৫৩৪০. ০১৭৫০০৯৫৩৩৮. ০১৮১৬৭৫৫০৬৫. মেইলঃ-hotelmohona@hotmail.com।
  • সাগর কন্যা রিসোর্ট লিঃ - কুয়াকাটা পর্যটন এলাকা, কলাপাড়া, কলাপাড়া; মোবাইল: ০১৭২১০৭৩৭৬৩।
  • বীচ হ্যাভেন - কুয়াকাটা পর্যটন এলাকা, কলাপাড়া, কলাপাড়া; মোবাইল: ০১৭৩০-০২১৩৪১।
  • হোটেল আল হেরা - কুয়াকাটা পর্যটন এলাকা, কলাপাড়া; ফোনঃ- +০৪৪২৮-৫৬০৫৪. মোবাইল: ০১৭১২-৪৯১৮০৩, ০১৮১৪-৭৩২৬৩১, ০১৭১২-৪৯১৮০৩।

কী খাবেন[সম্পাদনা]

এখানকার প্রায় প্রতিটি আবাসিক হোটেল বা হোটেলের সন্নিকটে রেস্তোরাঁ বা খাবার হোটেল রয়েছে। কুয়াকাটা ভ্রমণে গিয়ে পর্যটকদের বেশি আকর্ষণ থাকে সাগরের বিভিন্ন মাছের মেন্যুর প্রতি। বিশেষ করে চিংড়ি, রূপচাঁদা, লাইট্যা, ছুরি মাছসহ মজাদার শুটকি মাছের ভর্তার প্রতিই পর্যটকদের আকর্ষণ বেশি থাকে। খাবারের মেন্যু অনুযায়ী একে রেস্তোরাঁয় একেক ধরনের মূল্য তালিকা দেখা যায়।

সতর্কতা[সম্পাদনা]

যেকোনো সমস্যায় যোগাযোগ করতে পারেন -

জননিরাপত্তা সম্পর্কিত যোগাযোগের জন্য
  • ওসি, কলাপাড়াঃ মোবাইল: ০১৭১৩-৩৭৪ ৩২৩।

বিষয়শ্রেণী তৈরি করুন