উইকিভ্রমণ থেকে

মণিপুরী রাজবাড়ি সিলেটের অন্যতম প্রধান দর্শনীয় স্থান, যা সিলেট সদরের অন্তর্গত মির্জাজাঙ্গাল এলাকায় অবস্থিত। এটি সিলেটের অন্যতম ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ১৮২২-২৪ খ্রিস্টাব্দে সিলেট মহানগরীর মধ্যস্থলের মির্জাজাঙ্গাল রোডে এই ঐতিহাসিক বাড়িটি নির্মাণ করেন মণিপুরের রাজা গম্ভীর সিং ও তার ভাইয়েরা। এটি সিলেট শহরের '০' পয়েন্টের ৫০০ মিটারের মধ্যে রয়েছে।

বিশেষত্ব[সম্পাদনা]

ঊনবিংশ শতাব্দীতে সিলেট নগরীর মির্জাজাঙ্গালে রাজবাড়িটি স্থাপিত হয়। তৎকালীন মণিপুরী রাজ্যের তিন সহোদর রাজা চৌর্জিৎ সিং, মার্জিত সিং ও গম্ভীর সিং রাজবাড়িটি তৈরী করে এখানে বসবাস করেন। পরে চৌর্জিৎ সিং ও মার্জিত সিং কমলগঞ্জ উপজেলার ভানুগাছ এলাকায় বসতী স্থাপন করলেও রাজা গম্ভীর সিং থেকে যান মির্জাজাঙ্গালের রাজবাড়ীতে। ১৮২৬ সালে বৃটিশ সরকারের সহযোগিতায় বার্মার সাথে যুদ্ধ করে মনিপুর রাজ্য পুরুদ্ধারের পূর্ব পর্যন্ত রাজা গম্ভীর সিং সপরিবারে এখানেই অবস্থান করেন। ১৮২২ সালে মণিপুরী রাজ্যের সাথে বার্মার যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে রাজ্যের এক তৃতীয়াংশ লোক মারা যায়। অসংখ্য মণিপুরী পরিবার নিজ আবাসভূমি ছেড়ে বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যায়। তৎকালীন ক্ষমতাসীন রাজা চৌর্জিৎ সিংও কাছাড়ে পালিয়ে যান। রাজ্যভার গ্রহণ করেন তার সহোদর মার্জিত সিং। এক পর্যায়ে মার্জিত সিংও বার্মিজদের কাছে পরাজিত হন। পরিশেষে চৌর্জিৎ, মার্জিত ও গম্ভীর - তিন ভাই একত্রে পুনরায় চলে আসেন মির্জাজাঙ্গালের রাজবাড়ীতে। তৎকালীন বৃটিশ উপনিবেশ শাসকদের আশ্রয়ে এখানেই তারা বসতী স্থাপন করেন। বৃটিশ সরকারের অনুরোধে সিলেটে সশস্ত্র খাসিয়াদের দমনে মণিপুরী সৈন্যবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘদিন সিলেটে অবস্থান করার কারনে মণিপুরীদের সাংস্কৃতিক সম্ভারের নানা দিক এ অঞ্চলে জনপ্রিয়তা লাভ করে।

মির্জাজাঙ্গালের এই রাজবাড়িটি সংস্কারের জন্য আদ্যাবধি কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। রাজা কর্তৃক নির্মিত প্রাসাদের তিন চতুর্থাংশেরই এখন আর কোনো অস্তিত্ব নেই। বর্তমানে মণিপুরী ঠাকুর ও ব্রাহ্মণ পরিবারের লোকজন বংশ পরস্পরায় বসবাস করছেন রাজবাড়িতে। পূর্বসুরী রাজার রেখে যাওয়া নানা বস্তুকে স্বর্ণালী স্মৃতি হিসেবে ধারণ করে আছে পরিবারগুলো। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে একমণ ওজনের মন্দিরের একটি ঘণ্টা যার গায়ে মনিপুরী ভাষায় লেখা আছে, ‘‘শ্রীহট্ট কুনোঙ্গী শ্রী মহাপ্রভুদা শ্রীলশ্রী পঞ্চযুক্ত মণিপুরে স্বরচন্দ কীর্ত্তি সিংহ মহারাজন্য কৎখিবী সরিকনি ইতিশকাব্দা ১৮০০ তারিখ ১৮ জৈষ্ঠ্য’’।

কীভাবে যাবেন?[সম্পাদনা]

সিলেট শহরের যেকোন স্থান থেকে রিক্সা, মোটর বাইক, সিএনজি চালিত অটো রিক্সা বা ব্যক্তিগত গাড়ীযোগে সহজেই এখানে আসা যায়।

যেসব দৃশ্যাবলী দেখবেন[সম্পাদনা]

সিলেট নগরের মির্জাজাঙ্গালে অবস্থিত মণিপুরী রাজবাড়িটি প্রাচীন স্থাপত্য কীর্তির অন্যতম নির্দশন, যার নির্মাণ শৈলী এ অঞ্চলের কৃষ্টি-সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। রাজা গম্ভীর সিংয়ের স্মৃতিধন্য এই বাড়িটি বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে স্বকীয়তা হারালেও আকর্ষণ হারায়নি। বাড়ির প্রধান ফটক, সীমানা দেয়াল, মনোহর কারুকাজের সিড়ি ও বালাখাঁনার ধ্বংসাবশেষ বর্তমান মণিপুরী রাজবাড়ির স্মৃতিসম্বল। পর্যটকদের কাছেও রয়েছে বাড়িটির বিশেষ কদর।

  • বাড়ির ধ্বংসাবশেষ;
  • মন্দির;
  • চত্বর।

সংলগ্ন দর্শনীয় এলাকাসমূহ[সম্পাদনা]

খাওয়া দাওয়া[সম্পাদনা]

বাড়িটির আশেপাশেই প্রচুর হোটেল - রেস্তোরা আছে খাওয়া - দাওয়া করার জন্য। স্থানীয় পর্যায়ের বিখ্যাত খাদ্য হলো আথনী পোলাও ও সাতকরা (হাতকরা)। আরও কিনতে পারবেন স্থানীয় আনারস, কমলা, পান, লেবু, কাঠাল, চা-পাতা, তাজা মাছ। স্থানীয় হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোতে এসকল দ্রব্যাদির তৈরি নানারকম খাদ্যও পাওয়া যায়। বাড়িটির খুব নিকটেই রয়েছে কিছু উন্নতমানের হোটেল-রেস্তোরাঁঃ

  • পানশী রেস্তোরাঁ, জল্লারপাড় রোড, জিন্দাবাজার, সিলেট;
  • পাঁচভাই রেস্তোরাঁ, জল্লারপাড় রোড, জিন্দাবাজার, সিলেট;
  • ভোজনবাড়ি রেস্তোরাঁ, জল্লারপাড় রোড, জিন্দাবাজার, সিলেট;
  • প্রীতিরাজ রেস্তোরাঁ, জল্লারপাড় রোড, জিন্দাবাজার, সিলেট;
  • স্পাইসি রেস্তোরাঁ, সিটি সেন্টার, জিন্দাবাজার, সিলেট, ☎ ০৮২১-২৮৩২০০৮;
  • রয়েলশেফ, মির্জাজাঙ্গাল, সিলেট, ☎ ০৮২১-৭২৩০৯৬।

থাকা ও রাত্রিযাপনের স্থান[সম্পাদনা]

বাড়িটির নিকটে কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে; তবে তুলনামূলক ভালো মানের হোটের রয়েছে শাহজালালের দরগা এলাকায়। সেখানে থাকার জন্য প্রচুর আবাসিক হোটেল রয়েছে যেগুলোতে সিলেট ভ্রমণে আসা অধিকাংশ পর্যটক অবস্থান করে। এসি এবং নন-এসি উভয় ধরনের রুমের ব্যবস্থা সমৃদ্ধ ঐসকল হোটেলে মান ও বর্ডার ভেদে ভাড়া ৩০০/- হতে ৫,০০০/-।