উইকিভ্রমণ থেকে


বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলা শহরের পাঁচ মাইল দক্ষিণে মশাজান বা মসাজান নামক গ্রামে এই দিঘীর অবস্থান। দিঘীটিকে স্থানীয়ভাবে মশাদানের দিঘী বা সৈয়দ গোয়াসের দীঘি বলা হয়। ষোল’শ শতকের প্রথম দিকে দুইশত একর সীমানার মধ্যভাগে অবস্থিত এ দীঘির প্রতিষ্ঠাতা আধ্যাত্মিক পুরুষ খ্যাত সৈয়দ গোয়াস ছিলেন মধ্য যোগীয় মহাকবি সৈয়দ সুলতানের জ্যেষ্ঠসন্তান এবং সিলেট ও তরফ বিজয়ী সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দীনের ষষ্ঠ অধস্থনপুরুষ। দৃষ্টিনন্দন ও সুবিশাল এ দিঘীটি বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান হিসাবে স্বীকৃত।

দিঘীর বৈশিষ্ট্য[সম্পাদনা]

চারপাশে ঘন গাছগাছালি পরিবেষ্টিত লম্বাটে চৌকোণা আকৃতির দিঘীটির তলভাগে কোন রহস্যজনক কারণে অসংখ্য ছোটবড় নিকষ কালো রঙের অমসৃণ শিলাখণ্ড বিদ্যমান। দৃশ্যত(পরীক্ষিত নয়)এই পাথরগুলো উল্কাপিণ্ডের সাথে হুবহু সামঞ্জস্যপূর্ণ। হয়তো এই পাথরগুলোর প্রভাবেই এর পানি কাঁচের ন্যায় এতটাই স্বচ্ছ যে অনেক গভীরের তলদেশ পর্যন্ত স্পষ্টত দেখা যায়। এই দিঘীর পানিতে বিভিন্ন রকম মাছ থাকা স্বত্বেও আশ্চর্যজনক ভাবে লক্ষ্যনিয় বিষয় যে এতে কোনও ধরনের কচুরিপানা, জলজুদ্ভিদ, সাধারণ কীটপতঙ্গ বা জোঁকব্যাঙ একেবারেই টিকে থাকতে পারেনা। তাছারাও স্থানীয় জনগণের পরীক্ষিত বিষয় হিসেবে এটাও স্বীকৃত যে এই দিঘীতে কয়েকবার গোসল করলে সাধারণ পাছড়া বা চর্মরোগ সেরে যায়। কিন্তু এসবের কারন নিরূপণে স্মরণকাল যাবত “অলির কেরামত” বলে প্রচলিত একটা লোকশ্রুতি ব্যতীত বিজ্ঞানভিত্তিক কোন পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়েছে বলে জানা যায়নি।

দিঘী সৃষ্টির উপাখ্যান[সম্পাদনা]

আবহমান কাল থেকে প্রচলিত লোকশ্রুতি বা স্থানীয়দের লালিত কিংবদন্তি যে, অত্র বিজন স্থানে একটি সুপেয় জলাশয়ের জন্য আল্লাহ্‌র কাছে অলী সৈয়দ গোয়াসের মদদ প্রার্থনার প্রেক্ষিতে আকাশ আলোকিত করে নেমে আসা ফেরেশতাদের দ্বারা এক রাতেই এই দিঘি সৃষ্টি হয়েছে। একারনেই সৃষ্টির পর থেকে কখনও এ দিঘীকে সংস্কার কিংবা পুনঃখননের প্রয়োজন হয়নি, কালক্রমে নিজে থেকেই এটা গভীরতা প্রাপ্ত হয়।

যাতায়াত[সম্পাদনা]

ঢাকা থেকে সড়কপথে হবিগঞ্জের দূরত্ব ১৭৯ কি.মি., রেলপথে দূরত্ব ২৪২ কি.মি.। সময় লাগে সাড়ে তিন থকে চার ঘণ্টা। শায়েস্তাগঞ্জ হয়ে হবিগঞ্জ জেলাশহরের পথে ধুলিয়াখাল নামক স্থান থেকে হাতের ডান দিকে প্রায় দুই কি.মি. সড়ক পথে এগুনোর পর খোয়াই নদীর সেতু পেরিয়েই ঐতিহাসিক মশাজান গ্রামের তুড়ন দর্শনার্থীকে স্বাগত জানায়।