উইকিভ্রমণ থেকে

রাউজান বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা।

জানুন[সম্পাদনা]

চট্টগ্রাম জেলা সদর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে ২২°২৫´ থেকে ২২°৪০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৫১´ থেকে ৯১°৫৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে অবস্থিত রাউজান উপজেলার আয়তন ২৪৬.৫৮ বর্গ কিলোমিটার। রাউজান থানা গঠিত হয় ১৯৪৭ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে। রাউজান উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন রয়েছে।

নামকরণ[সম্পাদনা]

রাউজান উপজেলার প্রাচীন ইতিহাসের সাথে বৌদ্ধ উপনিবেশের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জানা গেছে যে, রাউজানে আদি বসতি স্থাপনকারী হলো বৌদ্ধরা। বিনাজুরীতে প্রায় ৪ শত বছরের প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার রয়েছে। রাউজান এলাকার নামকরণের সাথেও বৌদ্ধ ঐতিহ্য জড়িত। কারণ মোগল সুবেদার শায়েস্তা খান কর্তৃক ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম বিজয়ের প্রায় ১০০০ বছর পূর্ব থেকে সারা চট্টগ্রাম অঞ্চলই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মগ বা আরাকানীদের অধিকারে ছিল। ফলে রসিকতা করে অনেকে চট্টগ্রামকে মগের মুল্লুকও বলতেন। সে অনুযায়ী ধারণা করা হয় যে, রাউজানও একসময় আরাকান রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। আরাকানী ভাষায় এটিকে বলা হত রজোওয়াং বা রাজ পরিবারের ভূমি। আর এ নামের অপভ্রংশ থেকেই রাউজান নামের উৎপত্তি হয়েছে বলে বিশিষ্ট পণ্ডিতগণের ধারণা।

জনসংখ্যা[সম্পাদনা]

২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাউজান উপজেলার জনসংখ্যা ৩,২৫,৩৮৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১,৬৩,৯৬৩ জন এবং মহিলা ১,৬১,৪২৬ জন। এ উপজেলার ৭৫% লোক মুসলিম, ১৮% হিন্দু, ৬% বৌদ্ধ এবং ১% অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।

কীভাবে যাবেন[সম্পাদনা]

চট্টগ্রাম মহানগরীর অক্সিজেন মোড় থেকে রাউজান উপজেলা সদরের দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার।

সড়কপথে[সম্পাদনা]

চট্টগ্রাম শহরের অক্সিজেন মোড় এলাকা থেকে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি বাস যোগে রাউজান যাওয়া যায়। রাঙ্গামাটি সড়ক ছাড়াও কাপ্তাই সড়ক হয়ে দক্ষিণ রাউজান যাওয়া যায়। এছাড়া চট্টগ্রাম নগরীর অক্সিজেন মোড় এবং কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগেও রাউজান যাওয়া যায়। বর্তমানে মুরাদপুর জামান হোটেল এর সামনে থেকে বাসযোগে সরাসরি রাউজান যাওয়া যায় (ভাড়া ৭০ টাকা মাত্র)।

নৌপথে[সম্পাদনা]

নৌপথে ভ্রমণ পিয়াসুরা ইচ্ছে করলে নৌপথেও রাউজান যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে চট্টগ্রাম শহরের কালুরঘাট এলাকা থেকে রিজার্ভ স্পীডবোট ভাড়া করতে হবে।

দর্শনীয় স্থান[সম্পাদনা]

  • চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে ২০ কিলোমিটার পূর্বে এবং রাউজান উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দক্ষিণে পাহাড়তলী ইউনিয়নে অবস্থিত। এটি চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক সংলগ্ন হওয়ায় চট্টগ্রাম শহর থেকে সহজেই বাস বা সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগে যাওয়া যায়।
  • মাস্টারদা সূর্যসেনের বাস্তুভিটা ও স্মৃতিসৌধ চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে ১৩ কিলোমিটার পূর্বে এবং রাউজান উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে নোয়াপাড়া ইউনিয়নে অবস্থিত। চট্টগ্রাম শহর থেকে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক হয়ে বাস বা সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগে নোয়াপাড়া পথেরহাট নেমে রিক্সা বা অটোরিক্সা যোগে যাওয়া যায়। এছাড়া উপজেলা সদর থেকে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগে সরাসরি এ বাস্তুভিটায় যাওয়া যায়।
  • মহাকবি নবীনচন্দ্র সেনের বাস্তুভিটা ও স্মৃতিসৌধ রাউজান উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে পূর্ব গুজরা ইউনিয়নে অবস্থিত। সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগে যাওয়া যায়। এছাড়া কাপ্তাই সড়ক হতে নোয়াপাড়া সেকশন-২ সড়ক দিয়ে পুরাতন রঘুনন্দন চৌধুরী হাট হয়ে নিশ্চার ঘাট ব্রীজ সংলগ্ন এ বাস্তুভিটায় যাওয়া যায়।
  • মহামুনি বৌদ্ধবিহার চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে ২০ কিলোমিটার পূর্বে এবং রাউজান উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দক্ষিণে পাহাড়তলী ইউনিয়নে অবস্থিত। চট্টগ্রাম শহর থেকে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক হয়ে বাস বা সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগে পাহাড়তলী নেমে দক্ষিণ দিকে রিক্সা বা অটোরিক্সা যোগে যাওয়া যায়। এছাড়া উপজেলা সদর থেকে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগে সরাসরি মহামুনি যাওয়া যায়।
  • ডাবুয়া ঐতিহ্যবাহী ধর বাড়ী রাউজান উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার উত্তরে ডাবুয়া ইউনিয়নে অবস্থিত। সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগে যাওয়া যায়। এখানে দেখার মত রয়েছে রাধামাধব মন্দির ও দীঘি।
  • জগন্নাথ দেবালয় ও তোড়ন রাউজান উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার উত্তরে ডাবুয়া ইউনিয়নে অবস্থিত। সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগে যাওয়া যায়।
  • কৈলাসেশ্বর শিবমন্দির ও শিবমূর্তি রাউজান উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার উত্তরে ডাবুয়া ইউনিয়নে অবস্থিত। সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগে যাওয়া যায়। এটি ঊনবিংশ শতাব্দীর মন্দির।
  • আবুরখীল বৌদ্ধ বিহার চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে ১৪ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে এবং রাউজান উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে উরকিরচর ইউনিয়নে অবস্থিত। চট্টগ্রাম শহর থেকে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক হয়ে বাস বা সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগে বৈজ্জাখালী গেইট নেমে উত্তর দিকে রিক্সা বা অটোরিক্সা যোগে যাওয়া যায়। এছাড়া উপজেলা সদর থেকে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগে সরাসরি আবুরখীল যাওয়া যায়।
  • আর্যমৈত্রেয় বৌদ্ধ বিহার রাউজান উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দক্ষিণে রাউজান ইউনিয়নে অবস্থিত। সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগে যাওয়া যায়। এটি শায়িত মূর্তির জন্য জনপ্রিয়।
  • ঐতিহাসিক লস্কর উজির দীঘি রাউজান উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দক্ষিণে কদলপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগে যাওয়া যায়। এছাড়া কাপ্তাই সড়কের পাহাড়তলী হয়ে উত্তর দিকে লস্কর উজির দীঘি যাওয়া যায়।
  • লাম্বুরহাট চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে ২০ কিলোমিটার পূর্বে এবং রাউজান উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দক্ষিণে বাগোয়ান ইউনিয়নে অবস্থিত। চট্টগ্রাম শহর থেকে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক হয়ে বাস বা সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগে গশ্চি নয়াহাট নেমে দক্ষিণ দিকে রিক্সা বা অটোরিক্সা যোগে যাওয়া যায়। এছাড়া উপজেলা সদর থেকে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগে সরাসরি মহামুনি যাওয়া যায়। কর্ণফুলী নদীর পাড়ের এ হাট চট্টগ্রাম জেলার অতি প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী হাটগুলোর একটি। নগরীর কালুরঘাট থেকে নৌপথে স্পীডবোট যোগেও লাম্বুরহাট যাওয়া যায়।
  • আশরাফ শাহ (রহ.) মাজার রাউজান উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দক্ষিণে কদলপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগে যাওয়া যায়। এছাড়া কাপ্তাই সড়কের পাহাড়তলী হয়ে উত্তর দিকে এ মাজারে যাওয়া যায়।
  • সাহেব বিবি মসজিদ, রাউজান হরিশ খানপাড়া

কোথায় থাকবেন[সম্পাদনা]

রাউজানে থাকার জন্য সরকারি পরিচালনাধীন উপজেলা পরিষদ ডাক বাংলো ছাড়াও ব্যক্তি মালিকানাধীন সুলভ মূল্যে থাকার মত হোটেল রয়েছে।

খাওয়া দাওয়া[সম্পাদনা]

রাউজানের রাঙ্গামাটি সড়ক সংলগ্ন পৌরসভা এলাকায় ও কাপ্তাই সড়ক সংলগ্ন নোয়াপাড়া, পাহাড়তলী ইত্যাদি এলাকায় যে কোন রেস্টুরেন্টে সুলভ মূল্যে খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।