উইকিভ্রমণ থেকে

রাণীশংকৈল উপজেলা বাংলাদেশের একটি প্রশাসনিক এলাকা যা রংপুর বিভাগের ঠাকুরগাঁও জেলার অন্তর্ভূক্ত। রাণীশংকৈল উপজেলা ২৫°৪৮´ উত্তর অক্ষাংশ হতে ২৬°০৪´ উত্তর অক্ষাংশের এবং ৮৮°০৮´ পূর্ব দ্রাঘিমা হতে ৮৮°২১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। ৩৩৭.৮০ বর্গ কিমি আয়তনের এই উপজেলাটির উত্তরে বালিয়াডাঙ্গীঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা; দক্ষিণে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য; পূর্বে পীরগঞ্জঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা এবং পশ্চিমে হরিপুর উপজেলা অবস্থিত।

কীভাবে যাবেন?[সম্পাদনা]

দেশের যেকোন স্থান হতে রাণীশংকৈল উপজেলায় সরাসরি আসতে হলে কেবলমাত্র সড়কপথে আসতে হয়; রেল, আকাশ বা জলপথে এখানে সরাসরি আসার কোনো ব্যবস্থা এখনও গড়ে ওঠেনি। জেলা শহর ঠাকুরগাঁও এবং নিকটবর্তী উপজেলা পীরগঞ্জে রেললাইন থাকলেও রাণীশংকৈল উপজেলায় কোনো রেললাইন নেই। ঠাকুরগাঁওয়ে একটি বিমানবন্দর থাকলেও তা বর্তমানে অব্যবহৃত এবং নাব্যতা ও বড় নদ-নদী না-থাকায় এ জেলায় কোনো নৌ-পথও গড়ে ওঠেনি।

স্থলপথে[সম্পাদনা]

ঠাকুরগাঁও জেলা শহর হতে সড়ক পথে রাণীশংকৈল উপজেলার দূরত্ব ৪০ কি:মি: এবং সড়ক পথে ঢাকা হতে রাণীশংকৈল উপজেলার দূরত্ব ৪৮০ কিলোমিটার।

সড়কপথ[সম্পাদনা]

ঢাকা কিংবা চট্টগ্রাম থেকে রাণীশংকৈল উপজেলায় আসতে হলে মহাসড়ক পথে টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, বগুড়া, গাইবান্ধা, রংপুর এবং দিনাজপুর জেলা হয়ে আসতে হয়। ঢাকা থেকে এখানে সরাসরি বাসে আসা যায়; অসংখ্য বিলাসবহুল পরিবহনের গাড়ি ঢাকা-ঠাকুরগাঁও/দিনাজপুর-রাণীশংকৈল রুটে চলাচল করে। ঠাকুরগাঁও সদরের সাথে এই উপজেলার পাকা সড়ক পথে যোগাযোগ রয়েছে। তাছাড়াও উপজেলা সদর হতে ইউনিয়নগুলোতে যাওয়ার জন্য পাকা রাস্তা রয়েছে।

ঢাকার গাবতলী, মহাখালী, সায়েদাবাদ, শ্যামলী, কল্যানপুর, কলাবাগান, ফকিরাপুল, আসাদগেট - প্রভৃতি বাস স্টেশন থেকে রাণীশংকৈল ও ঠাকুরগাঁও আসার সরাসরি দুরপাল্লার এসি ও নন-এসি বাস সার্ভিস আছে; এগুলোতে সময় লাগে ৭.৩০ হতে ১০ ঘণ্টা। ঢাকা থেকে রাণীশংকৈল ও ঠাকুরগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে হানিফ, নাবিল, শ্যামলী, শ্যামলী এন আর, আসাদ, আহাদ, আরাফাত, বাবলু, কেয়া, হেরিটেজ প্রভৃতি পরিবহন কোম্পানীর বাস আছে প্রতিদিন।

  • কর্ণফুলী পরিবহন: ঢাকা : মোবাইল +৮৮০১৬৭৪-৮০৫ ১৬৪ (আবদুল্লাহপুর);
  • কেয়া পরিবহন: ঢাকা : মোবাইল +৮৮০১৭১১-১১৮৪০২ (কল্যাণপুর) এবং ঠাকুরগাঁও : ☎ ০৫৬১-৫২৪০২, মোবাইল +৮৮০১৭১৫-৭১৭৯০৭;
  • নাবিল পরিবহন: ঢাকা : ☎ ০২-৮১২৭৯৪৯ (আসাদ গেট) এবং ঠাকুরগাঁও : +৮৮০১৭৪২-৫৫৪৪২২;
  • বাবলু এন্টারপ্রাইজ: ঢাকা : ☎ ০২-৮১২০৬৫৩, মোবাইল +৮৮০১৭১৬-৯৩২১২২ (শ্যামলী-রিং রোড), +৮৮০১৭১৬-৪৫১৮৫৫ (টেকনিক্যাল) এবং ঠাকুরগাঁও : ☎ ০৫৬১-৬১৯৪৬, মোবাইল +৮৮০১৭১৪-০৪৬২৯৮, ০১১৯০-৬৭২৮৭৯;
  • বালিয়াডাংগী এক্সপ্রেস: ঠাকুরগাঁও : মোবাইল +৮৮০১৭২৮-৫০৮৫৯৯, ০১১৯১-৮১৩১০৫;
  • শ্যামলী পরিবহন: ঢাকা : ☎ ০২-৯০০৩৩১, ৮০৩৪২৭৫ (কল্যাণপুর);
  • হানিফ এন্টারপ্রাইজ: ঢাকা : ☎ ০২-৮১২৪৩৯৯, ৯১৩০৩৮৪, মোবাইল +৮৮০১৬৭৩-৯৫২৩৩৩ (কলেজ গেট), +৮৮০১৭২৭-২৯১১৪২(শ্যামলী-রিং রোড), +৮৮০১৭১৩-৪০২৬৬১ (কল্যাণপুর), +৮৮০১৭১৩-৪০২৬৭১, +৮৮০১৭১৩-৪০২৬৩১ (আরামবাগ) এবং ঠাকুরগাঁও : ☎ ০৫৬১-৫২৬৫৩, মোবাইল +৮৮০১৭১৩-২০১৭০৪, +৮৮০১৭১৮-০৮৯৪৪৯।
  • ঢাকা-রাণীশংকৈল ও ঠাকুরগাঁও রুটে সরাসরি চলাচলকারী পরিবহনে যাতায়তের ক্ষেত্রে ভাড়া হলোঃ
    • এসি বাসে - ১২০০/- (বিজনেস ক্লাস) এবং
    • নন-এসি বাসে - ৪৫০/- হতে ৭০০/-।

রেলপথ[সম্পাদনা]

রাণীশংকৈল উপজেলায় কোনো রেলপথ নেই; তবে উপজেলা সদর থেকে মাত্র ১২ কিঃমিঃ দূরত্বে পীরগঞ্জ উপজেলার পীরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন থেকে আসা যায় রাণীশংকৈলে। এছাড়াও ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা সদরে অবস্থিত ঠাকুরগাঁও রোড রেলওয়ে স্টেশন থেকেও আসা সম্ভব।

ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে ঠাকুরগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা ট্রেনে সরাসরি ঠাকুরগাঁও কিংবা পীরগঞ্জ স্টেশনে পৌঁছে সেখান থেকে সড়কপথে রাণীশংকৈল আসা যায়। কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে প্রতিদিন একাধিক ট্রেন ঠাকুরগাঁও এবং পীরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। পঞ্চগড় অভিমুখী অথবা পঞ্চগড় থেকে ছেড়ে আসা সকল ট্রেনই ঠাকুরগাঁও রোড রেলওয়ে স্টেশন এবং পীরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রা বিরতি প্রদান করে। ঢাকা-পীরগঞ্জ-ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় রুটে চলাচলকারী ট্রেনগুলো হলোঃ

  • পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস এবং একতা এক্সপ্রেস।

ঢাকা-পীরগঞ্জ-ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় রুটে চলাচলকারী রেলে ঢাকা হতে ঠাকুরগাঁও আসার ক্ষেত্রে ভাড়া হলো -

  • এসি-বাথ - ১৮৩৩ টাকা;
  • ১ম শ্রেণির বাথ - ১১৯১ টাকা;
  • স্নিগ্ধা- ৯৮৯ টাকা;
  • শোভন চেয়ার - ৫২০ টাকা।

এবং ঢাকা-পীরগঞ্জ-ঢাকা ভাড়া হলো-

  • এসি-বাথ - ১১৪৫ টাকা;
  • স্নিগ্ধা - ৯৫৫ টাকা;
  • শোভন চেয়ার - ৫০০ টাকা।

এছাড়াও রাজশাহী-পীরগঞ্জ-ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় রুটে বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস, পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁও-পীরগঞ্জ-রংপুর-সান্তাহার রুটে দোলনচাঁপা এক্সপ্রেস, এবং আরো কিছু ট্রেন চলে যেমনঃ কাঞ্চন এক্সপ্রেস, সেভেনআপ এবং ডেমো ট্রেনটি পার্বতীপুর - রংপুর হয়ে চলাচল করে।

ট্রেন সম্পর্কিত তথ্যের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন:

  • কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, ☎ ০২-৯৩৫৮৬৩৪,৮৩১৫৮৫৭, ৯৩৩১৮২২, মোবাইল নম্বর: +৮৮০১৭১১-৬৯১৬১২;
  • বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন, ☎ ০২-৮৯২৪২৩৯;
  • ওয়েবসাইট: www.railway.gov.bd।

আকাশ পথে[সম্পাদনা]

ঠাকুরগাঁওয়ে বিমানবন্দর থাকলেও তা চালু না-থাকায় এখানে সরাসরি আকাশ পথে আসা যায় না, তবে ঢাকা থেকে সরাসরি বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের সাথে; ঢাকা থেকে সৈয়দপুর এসে সেখান থেকে সড়কপথে রাণীশংকৈল উপজেলায় আসা যায়। বাংলাদেশ বিমান, নভো এয়ার, ইউএস বাংলা, এয়ার এসট্রা, ইউনাইটেড এয়ার - প্রভৃতি বিমান সংস্থার বিমান পরিষেবা রয়েছে ঢাকা থেকে সৈয়দপুর আসার জন্য।

প্রতিদিনই ঢাকা-সৈয়দপুর ও সৈয়দপুর-ঢাকা রুটে ১২/১৪টি বিমান চলাচল করে; এতে করে যাতায়তের ক্ষেত্রে ভাড়া লাগবে একপথে ৩,০০০/- এবং রিটার্ণ টিকিট ৬,০০০/-।

এই সম্পর্কিত তথ্যের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন:

    • ম্যানেজার, সৈয়দপুর বিমান বন্দর, মোবাইল - +৮৮০১৫৫৬-৩৮৩ ৩৪৯।

জল পথে[সম্পাদনা]

অপ্রচলিত মাধ্যম হিসাবে নৌপথ ব্যবহৃত হয়ে থাকে; তবে কেবলমাত্র স্থানীয় পর্যায় ছাড়া অন্য কোনো এলাকার সাথে, কিংবা ঢাকা থেকে বা অন্যান্য বড় শহর হতে সরাসরি কোনো নৌযান চলাচল করে না। অবশ্য, চরাঞ্চলে যোগাযোগের একমাত্র বাহন নৌযান।

দর্শনীয় স্থান ও স্থাপনা[সম্পাদনা]

  • রাজা টংকনাথের রাজবাড়ী - মালদুয়ার;
  • রাজা বীরেন্দ্রনাথের রাজবাড়ী - জগদল;
  • পীর শাহ নাসিরউদ্দীন-এর মাজার - নেকমরদ;
  • গোরক্ষনাথ মন্দির;
  • বাংলা গড়;
  • রাণী সাগর - রামরাই;
  • শিব দীঘি - গৌরকৈ;
  • খুনিয়া দিঘি স্মৃতি সৌধ ও বধ্যভূমি;
  • শালবাগান;
  • হেলিপ্যাড মাঠ এবং উপজেলা মডেল মসজিদ;
  • উপজেলা পুকুর চত্বর;
  • মহলবাড়ি মসজিদ;
  • রাণীশংকৈল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪);
  • রানীশংকৈল মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৩৬);
  • বাসনাহার আদর্শ গ্রাম পুকুর।

খাওয়া দাওয়া[সম্পাদনা]

‘সিদল ভর্তা’ এখানকার জনপ্রিয় খাবার, যা কয়েক ধরনের শুঁটকির সঙ্গে নানা ধরনের মসলা মিশিয়ে বেটে তৈরি করা হয়। এছাড়াও রয়েছে বিখ্যাত “হাড়িভাঙ্গা” আম, তামাক ও আখ। এখানে সাধারণভাবে দৈনন্দিন খাওয়া-দাওয়ার জন্য স্থানীয় হোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলোতে সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়। স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো হলো : পাটশাক ও লাফা শাকের ঝোল, সিদলের ভর্তা, চেং বা শাটি (টাকি) মাছের পোড়া বা সিদ্ধ ভর্তা, কচি কচু পাতার পোড়া বা সিদ্ধ ভর্তা, পেল্কা, কাঁচা আমের তরকারি, কাঁচা কাঁঠালের তরকারি, আমসি, টমেটোর টক, নতুন ধানের ভাকা পিঠা (ভাপা পিঠা), পাকোয়ান পিঠা, নুনাস বা নুনিয়া পিঠা, চিতুয়া পিঠা, গুড়গুড়িয়া পিঠা, আঁখের নতুন গুড়ের খৈয়ের মুড়কি, মুড়ির নাড়ু, চিড়ার চিপড়ি।

থাকা ও রাত্রি যাপনের স্থান[সম্পাদনা]

রাণীশংকৈল উপজেলায় থাকার জন্য স্থানীয় পর্যায়ের কিছু সাধারণ মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। এছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় থাকার জন্য উন্নতমানের আবাসন সুবিধা পাওয়া যায় -

  • সার্কিট হাউস, ঠাকুরগাঁও, ☎ ০৫৬১-৫৩৪০০;
  • জেলা পরিষদ ডাক বাংলো, রাণীশংকৈল, ঠাকুরগাঁও, মোবাইল +৮৮০১৭১২৭৪৪০৯৪;
  • হোটেল আবাসিক, বন্দর বাজার, রাণীশংকৈল, ঠাকুরগাঁও, মোবাইল +৮৮০১৭১৭২১৯৮৪৩।

জরুরি নম্বরসমূহ[সম্পাদনা]

জননিরাপত্তা সম্পর্কিত যোগাযোগের জন্য
  • ওসি ঠাকুরগাঁও: মোবাইল +৮৮০১৭১৩-৩৭৩ ৯৮৫;
  • ওসি রাণীশংকৈল: মোবাইল +৮৮০১৭১৩-৩৭৩ ৯৮৭।