বাংলাদেশের "ঢাকাইয়া টিলা" রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু উপজেলার অন্তর্গত একটি টিলা/মহল্লা/গ্রাম। ঢাকাইয়া টিলা,৬ নং মাইনীমুখ ইউনিয়ন ৩ নং ওয়াড এর অন্তরগত ঢাকাইয়া টিলায় ২৫ পরিবার মিলেমিশে বসতি করে আছে সেই ১৯৮০ সাল থেকে। ঢাকাইয়া টিলা দেখতে অনেক সুন্দর।
জানুন
[সম্পাদনা]রাঙ্গামাটি জেলা সদর থেকে প্রায় ৭৬ কিলোমিটার উত্তরে ২২°৪৮' হতে ২৩°০৬' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°০৫' হতে ৯২°১৯' পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে অবস্থিত লংগদু উপজেলার আয়তন ৩৮৮.৪৯ বর্গ কিলোমিটার। ১৮৬১ সালে লংগদু থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। এ উপজেলায় বর্তমানে ৭টি ইউনিয়ন রয়েছে।
নামকরণ
[সম্পাদনা]লংগদু নামের উৎপত্তি সম্পর্কে কোন সুনিশ্চিত ধারণা পাওয়া যায় না, তবে কয়েকটি ব্যাখ্যা প্রচলিত আছে। লংগদু শব্দটির কোন আভিধানিক অর্থ নেই। ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ শাসনামলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা প্রতিষ্ঠার পর ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য একটি থানা গঠন করে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার সদর দপ্তর তখন চন্দ্রঘোনায় স্থাপন করা হয়। জেলা সদর থেকে নবগঠিত থানাটির দীর্ঘ দূরত্বের জন্য এটিকে ইংরেজী শব্দ লং (অর্থাৎ দীর্ঘ) দূর সংক্ষেপে লংদূর বা লংদু ডাকা হত। লংদু পরবর্তীকালে লোকমুখে পরিবর্তিত হয়ে লংগদু নামে অভিহিত হয় বলে অনেকেই ধারণা করেন। লংগদু থানা গঠন পরবর্তী সময়ে সমগ্র থানায় লংগদু নামে একটিই ইউনিয়ন ছিল, যা পরবর্তীতে ৭টি ইউনিয়নে বিভক্ত হয়েছে। লংগদু নামকরণের বিষয়ে কিছু ঐতিহাসিক ধারণা প্রচলিত আছে। বর্তমানে এ অঞ্চলে চাকমা নৃ-গোষ্ঠীর আধিক্য থাকলেও একসময়ে ত্রিপুরা এবং মারমা নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস ছিল। লংগদু নামকরণের ক্ষেত্রে ত্রিপুরা এবং মারমা নৃ-গোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্ত দুইটি ব্যাখ্যা রয়েছে। পার্বত্য এলাকায় বসবাসকারী মারমাদের পূর্বপুরুষগণ মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশের (সাবেক আরাকান) অধিবাসী ছিলেন। ১৭৮৪ সালে বর্মীরাজা বোদপায়া আরাকান জয় করেন। সৈন্যেরা আরাকান জয় করে আরাকানীদের উপর অত্যাচার শুরু করলে প্রাণ রক্ষার্থে তৎকালীন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর অধিকৃত চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় আরাকানীরা উদ্বাস্তু হিসাবে আশ্রয় গ্রহণ করে। একদল আরাকানী মগ পরিবার জনৈক ম্রে-চাই এর নেতৃত্বে পালংখাইং নদী অববাহিকা এলাকা থেকে কর্ণফুলি নদীর উত্তরে বসতি গড়ে তোলে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ম্রে-চাই কে মং রাজা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকায় বসবাসকারী আরাকানী মগগণ নিজেদের নামের সাথে মারমা পদবী গ্রহণ করেন। মারমা সম্প্রদায়ের কয়েকটি পরিবার মিলে গংসা বা দল গঠিত হয়। গং অর্থ সর্দার এবং সা অর্থ লোক বা সন্তান উভয়ই বুঝায়। গংসা অর্থে কোন দলপতির লোক বুঝানো হতো। মারমাদের অনেকগুলো গংসার মধ্যে লংকাডু-সা উল্লেখযোগ্য। লংকাডু নামে কোন দলপতি বা সর্দারের নামানুসারে লংকাডু-সা নামক গংসা বা দলের উৎপত্তি হয়েছিল মর্মে মনে করা হয়। ব্যক্তি লংকাডু বা লংকাডু-সা দলের নামানুসারে লংকাডু বা লংগাডু বা লংগদু নামের উৎপত্তি হয়েছে। লংগদু নামকরণের বিষয়ে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের সাথে সম্পর্কিত ব্যাখ্যাটি হল, মধ্যযুগে ত্রিপুরায় একটি শক্তিশালী রাজবংশ ছিল। পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকার নিয়ে ত্রিপুরার রাজা, আরাকানের রাজা এবং বাংলার সুলতানের অনেক যুদ্ধ বিগ্রহ হয়েছিল। ত্রিপুরারাজ বিজয়মাণিক্য (১৫৩২-১৫৬৩ খ্রিস্টাব্দ) চট্টগ্রাম জয় করে রামু পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছিলেন বলে জানা যায়। ষোড়শ শতাব্দীতে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোকজন পার্বত্য ত্রিপুরা হতে আরাকান পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। সে সময়ে ত্রিপুরা রাজ্যের সীমানা চট্টগ্রাম হতে বরাক নদী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। পঞ্চদশ শতাব্দীতে ত্রিপুরার রিয়াং সম্প্রদায়ের লোকজন পার্বত্য চট্টগ্রামের উত্তরাংশের মাইনী উপত্যকায় বসবাস শুরু করে। তারা মাইয়ুনী টাল্যাং থেকে এসেছিল বিধায় নদীর নাম মাইনী হয়েছে। ত্রিপুরা এবং রিয়াং ভাষায় মাই অর্থ ধান এবং ভাত দুটোই বুঝায়। মাইয়ুনী টাল্যাং শব্দের অর্থ ধান্য এলাকা বা পাহাড়। মাইনী নদী অববাহিকায় বসবাসকারী ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের দলপতির নাম ছিল লেংদু। সেই দলপতির নামে অত্র এলাকায় একটি খাল রয়েছে। খালটি লংগদুর পশ্চিমে বন্দুকভাঙ্গা পাহাড়শ্রেণী থেকে উৎপন্ন হয়ে পূর্বে কাচালং নদীতে এসে মিশেছে। ধারণা করা যায় যে, ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের দলপতির নামানুসারে পরবর্তীতে এলাকার নাম লেংদু বা লাংগাদু বা লংগদু হয়েছে।
জনসংখ্যা
[সম্পাদনা]২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী লংগদু উপজেলার জনসংখ্যা ৮৪,৬৭৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪৩,৮৪৬ জন এবং মহিলা ৪০,৮৩১ জন। মোট জনসংখ্যার ৭২.৪১% মুসলিম, ১.৫০% হিন্দু, ২৫.৮৭% বৌদ্ধ এবং ০.২২% খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী রয়েছে। এ উপজেলায় প্রধানত বাঙালি ও চাকমা সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করে। এছাড়া অল্পসংখ্যক ত্রিপুরা ও পাংখোয়া জাতিসত্বার লোকজন রয়েছে।
কীভাবে যাবেন
[সম্পাদনা]রাঙ্গামাটি জেলা সদর থেকে লংগদু উপজেলায় যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম নৌপথ। লঞ্চ, ইঞ্জিন চালিত বোট প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম। তবে ঢাকা সায়দাবাদ ও গাবতুলি থেকে বাস এ বাইট্রাপাড়া আসা যায় খাগড়াছড়ি থেকে বাস বা সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগে এ উপজেলায় যাওয়া যায়।
দর্শনীয় স্থান
[সম্পাদনা]- কাপ্তাই হ্রদ। বাংলাদেশের বৃহত্তম কৃত্রিম এ হ্রদ রাঙ্গামাটি জেলার রাঙ্গামাটি সদর, কাপ্তাই, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি, বরকল, বাঘাইছড়ি, লংগদু ও নানিয়ারচর উপজেলা জুড়ে বিস্তৃত।
- তিনটিলা বনবিহার, লংগদু ইউনিয়ন। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ বিহারে লংগদু লঞ্চঘাট থেকে পায়ে হেঁটে বা মোটর সাইকেল যোগে যাওয়া যায়।
- ডুলুছড়ি জেতবন বিহার, লংগদু ইউনিয়ন। উপজেলা সদর থেকে মোটরসইকেল যোগে যাওয়া যায়।
- কাট্টলী বিল, লংগদু ইউনিয়ন। উপজেলা সদর হতে দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত এ বিলটিতে নৌকাযোগে ভ্রমণ করা যায়।
কোথায় থাকবেন
[সম্পাদনা]- নিসা আবাসিক হোটেল, মাইনীমুখ বাজার, ইউনিয়ন পরিষদের এর পাশে।। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন।
- বনবিভাগ রেস্ট হাউজ, মাইনীমুখ, লংগদু। মাইনীমুখ বনবিভাগের পরিচালনাধীন।
- রাবেতা গেস্ট হাউজ, মাইনীমুখ, লংগদু।