সিরাজগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু এবং সিরাজগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধের অপূর্ব সৌন্দর্য এ জেলাকে পর্যটনসমৃদ্ধ জেলার খ্যাতি এনে দিয়েছে।
যেভাবে যাবেন
[সম্পাদনা]ঢাকা থেকে সড়ক ও রেলপথে সিরাজগঞ্জ যাওয়া যায়।
সড়কপথ
[সম্পাদনা]ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জ সড়কপথে সরাসরি বিরতিহীন বাসে করে যাওয়া যায়। এসি/নন এসি উভয় ধরণের বাসের সু-ব্যবস্থা রয়েছে। নন এসি বাস বাসের ভাড়া ২৮০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ৩৫০ টাকা। বাস সার্ভিস গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ঢাকা লাইন পরিবহন, অভি ক্লাসিক, স্টার লিট পরিবহন (মুকু্ন্দগাতী কাউন্টার, বেলকুচি উপজেলা) ☎ ০১৭২১৩৮২৩৭৩; এস.আই (কড্ডার মোড় কাউন্টার) ☎ ০১৭১৩৭১১১৪০।
নৌপথ
[সম্পাদনা]ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জ নৌ যোগাযোগ নেই বললেই চলে। তবে শাহজাদপুর উপজেলাধীন বাঘাবাড়ীতে একটি নদী বন্দর আছে। চট্টগ্রাম হতে জ্বালানী তেলবাহী জাহাজ বাঘাবাড়ী জ্বালানী তেল ডিপোতে সংরক্ষণ করা হয় এবং সেখান থেকে জেলার জ্বালানী তেলের চাহিদা মিটিয়ে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে জ্বালানী তেল সরবরাহ করা হয়। সিরাজগঞ্জ (যমুনা নদী) - মানিকগঞ্জ (পদ্মা নদী) - মুন্সিগঞ্জ(পদ্মা ও ধলেশ্বরী নদী)- নারায়নগঞ্জ (শীতলক্ষ্যা নদী) - ঢাকা (বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদী) এই নৌপথে সীমিত আকারে ব্যবসায়ীদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে পণ্য পরিবহন করা হয়।
আকাশপথ
[সম্পাদনা]আকাশপথে ঢাকার সাথে সিরাজগঞ্জের কোন যোগাযোগ নেই। তবে বেলকুচি উপজেলায় অবস্থিত খাজা ইউনূস আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে একটি হেলিপ্যাড রয়েছে এবং ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জ জেলা সদরসহ সবকটি উপজেলায় হেলিকপ্টার যোগে যাতায়াত করা যায়।
রেলপথ
[সম্পাদনা]ঢাকা হইতে উত্তরবঙ্গগামী সকল আন্তঃনগর ট্রেন সিরাজগঞ্জের শহীদ এম.মনসুর আলী রেলস্টেশন (কড্ডার মোড়, সদর উপজেলা) হয়ে গন্তব্যে যায়। ট্রেনের সময়সূচীঃ
ট্রেন নং | নাম | বন্ধের দিন | হইতে | ছাড়ে | গন্তব্য |
---|---|---|---|---|---|
৭০৫ | একতা এক্সপ্রেস | মঙ্গলবার | ঢাকা | ১০০০ | দিনাজপুর |
৭৫১ | লালমনি এক্সপ্রেস | শুক্রবার | ঢাকা | ২২১০ | লালমনিরহাট |
৭৫৩ | সিল্কসিটি এক্সপ্রেস | রবিবার | ঢাকা | ১৪৪০ | রাজশাহী |
৭৫৭ | দ্রুতযান এক্সপ্রেস | বুধবার | ঢাকা | ২০০০ | দিনাজপুর |
৭৫৯ | পদ্মা এক্সপ্রেস | মঙ্গলবার | ঢাকা | ২৩১০ | রাজশাহী |
৭৬৫ | নীলসাগর এক্সপ্রেস | সোমবার | ঢাকা | ০৮০০ | চিলাহাটি |
৭৬৯ | ধূমকেতু এক্সপ্রেস | শনিবার | ঢাকা | ০৬০০ | রাজশাহী |
৭৭১ | রংপুর এক্সপ্রেস | রবিবার | ঢাকা | ০৯০০ | রংপুর |
৭৭৬ | সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস | শনিবার | ঢাকা | ১৭০০ | সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশন |
দর্শনীয় স্থান
[সম্পাদনা]- 1 বঙ্গবন্ধু সেতু। বঙ্গবন্ধু সেতু বা যমুনা বহুমুখী সেতু যমুনা নদীর উপরে অবস্থিত একটি সড়ক ও রেল সেতু। ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট এই সেতুটি বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ারদ্বিতীয় দীর্ঘতম সেতু। এটি যমুনা নাদীর পূর্ব তীরের ভূঞাপুর (ভুয়াপুর) এবং পশ্চিম তীরের সিরাজগঞ্জকে সংযুক্ত করেছে। পায়ে হেঁটে সেতু দেখার কোন সুযোগ নেই। তবে গড়ি বা যানবাহনে করে এটি পাড় হওয়া যায়। কার/হালকা যানবাহনে এটি অতিক্রম করতে খরচ হবে ৫০০ টাকা। চাইলে জেলে বা মাঝিদের নৌকায় সেতুর নিচে দিয়ে ভ্রমণের মাধ্যমে সেতুর সৌন্দর্য উপভোগ করা সম্ভব।
- 2 রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি, সিরাজগঞ্জ থেকে ৪০.২ কিলোমিটার দূরে শাহজাদপুর অবস্থিত।। এটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক জমিদার বাড়ি ছিল। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিভিন্ন শিল্পকর্ম সংগ্রহপূর্বক একে একটি জাদুঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে বসেই রচনা করেন তার বিখ্যাত গ্রন্থ সোনার তরী, বৈষ্ণব কবিতা, দুইপাখি, আকাশের চাঁদ, পুরস্কার, হৃদয়, যমুনা, চিত্রা, চৈতালী, ইত্যাদি, গীতাঞ্জলী কাব্যের কাজও শুরু করেন। যাতে পরবর্তীকালে তিনি নোবেল পুরস্কার পান। পোস্ট মাস্টার গল্পের 'রতন' চরিত্রও শাহজাদপুরে বসেই লেখা। চিত্রা, শীতে ও বসন্তে, নগর সঙ্গীতে এবং চৈত্রালীর ২৮টি কবিতা, ছিন্ন পত্রাবলীর ৩৮টি, পঞ্চভূতের অংশবিশেষ এবং বিসর্জনের নাটক তিনি শাহজাদপুরে বসেই রচনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ১৮৯০ থেকে ১৮৯৬ সাল পর্যন্ত মোট ৭ বছর এখানে জমিদারির কাজে শাহজাদপুরে অবস্থান করেছেন।
- নবরত্ন মন্দির (হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দির), মন্দিরটি উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুল গ্রামে অবস্থিত। মন্দিরটি বাংলাদেশের একটি প্রাচীন মন্দির ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। এটি উপজেলার হাটিকুমরুল গ্রামে অবস্থিত।
- পোতাজিয়া নবরত্ন মন্দির (পোতাজিয়া মন্দির)।
- শাহজাদপুর দরগাহ মসজিদ।
- বঙ্গবন্ধু যমুনা ইকোপার্ক। বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়ে ১২০ একর জায়গার উপরে সিরাজগঞ্জের যমুনা নদী ও বঙ্গবন্ধু সেতুর কোল ঘেঁসে বঙ্গবন্ধু যমুনা ইকোপার্ক অবস্থিত। এটি ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে হরিণ, বেজী, কাঠবিড়ালী, উদবিড়াল, সাপ, গুইসাপ এবং বিভিন্ন প্রজাতির পাখি রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরণের ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছ রয়েছে।