গঙ্গা খাত বা সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা বাংলাদেশের একটি দর্শনীয় স্থান, যা বঙ্গোপসাগরের অন্তর্গত। এটি খুলনা জেলার দুবলার চরের খুব কাছে এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত সংলগ্ন। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ৩৪০ কিঃ মিঃ দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে এটির অবস্থান।
বিশেষত্ব
[সম্পাদনা]১৪ কিলোমিটার ব্যাপী দীর্ঘ এই সমুদ্র খাদটি দুবলার চর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। গভীরতম এই উপত্যকার রেকর্ড আয়তন প্রায় ১৩৪০ মিটার। এর গড় গভীরতা প্রায় ১২০০ মিটার। এখানকার ডুবো গিরিখাত বঙ্গীয় উপবদ্বীপের অংশ, যা বিশ্বের বৃহত্তম ডুবো গিরিখাত হিসাবে বিবেচিত হয়।
গঙ্গা - ব্রহ্মপুত্র ব-দ্বীপের পশ্চিমে অবস্থিত এই স্থানটি বঙ্গোপসাগরের মধ্যে একটি গভীর খাদের মত জায়গা, যা গঙ্গা খাদ নামেও পরিচিত। এটি বিশ্বের বড় ১১টি বড় উপত্যকার একটি। জেলেরা তাদের বাঁশের হিসাব 'বাম' অনুযায়ী এই স্থানটিতে এসে কোনো হিসাব না পেয়ে এর নাম রাখেন 'না বাম'।
এখানে কয়েক প্রজাতির ডলফিন, তিমি ও হাঙ্গরসহ বিচিত্র জাতের বড় বড় মাছ পাওয়া যায়। কথিত আছে, এখানেই ১৮৬৩ সালে গ্যাডফ্লাই নামে একটা ২১২ টন ওজন বিশিষ্ট গানবোট ভারত থেকে ইংল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ ধনরত্ন নিয়ে যাওয়ার সময় ঝড়ের কবলে পড়ে ডু্বে যায়, যা অদ্যাবধি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
কীভাবে যাবেন
[সম্পাদনা]এটির অবস্থান বঙ্গোপসাগরে হওয়ায় বাগেরহাট বা খুলনা হতে যাওয়া সুবিধাজনক। প্রথমে বাগেরহাট জেলায় আসতে হবে; অথবা খুলনার মোংলা বন্দরে এসে সেখান থেকে ট্রলার কিংবা লঞ্চ ভাড়া করে যেতে হবে।
কী দেখবেন
[সম্পাদনা]বঙ্গোপসাগরের মধ্যে অবস্থিত হওয়ায় এখানে আপনি নৌযানে ভেসে বেড়াতে পারবেন এবং উপভোগ করবেন সমুদ্রের বিশালতা। এছাড়াও স্কুবা ডাইভিং করারও সুযোগ রয়েছে।
ঘুরে দেখুন
[সম্পাদনা]নিকটবর্তী দুবলার চরটি শুটকি মাছ প্রক্রিয়াজাতকরনের জন্য প্রসিদ্ধ। সেখানে মাছের শুটকি প্রক্রিয়াজাতকরন প্রত্যক্ষ করুন, মাছ ধরা দেখুন। দুবলার চরে হাঁটলে আপনি নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণীর দেখা পেতে পারেন। এছাড়া চরের চারপাশে পানি থাকায় এখানে নানা প্রজাতির মাছ ও জলজ উদ্ভিদের দেখা পাবেন।
প্রতি বছর কার্ত্তিক মাসে (খ্রিস্টীয় নভেম্বর) হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রাসমেলা এবং পূণ্যস্নানের আয়োজন হয়। এ উপলক্ষে মেলা হয়। তিনদিনব্যাপী এ মেলায় অনেক বিদেশি পর্যটকেরও সমাগম হয়।
কোথায় থাকবেন
[সম্পাদনা]পর্যটন জাহাজ বা নৌযান ছাড়াও সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে হিরণপয়েন্টের নীলকমল এবং টাইগার পয়েন্টের কচিখালী ও কাটকায় বন বিভাগের রেস্টহাউজে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। নীলকমলে দেশি পর্যটকদের জন্য প্রতি কক্ষ তিন হাজার টাকা, চার কক্ষ ১২ হাজার টাকা, কচিখালীতে প্রতি কক্ষ তিন হাজার টাকা, চার কক্ষ ১০ হাজার টাকা, কটকাতে প্রতি কক্ষ দুই হাজার টাকা, দুই কক্ষ চার হাজার টাকা খরচ পড়বে।
সুন্দরবনের পাশে সাতক্ষীরা শহরে সাধারণ মানের হোটেল ও শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জে এনজিও সুশীলনের রেস্টহাউস ও ডরমেটরিতে একক, পরিবার ও গ্রুপ নিয়ে থাকার সুবিধা রয়েছে।
মংলায় পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল, পশুর বন্দরে সাধারণ হোটেল আছে পর্যটকদের জন্য। খুলনা মহানগরে হোটেল রয়েল, ক্যাসেল সালাম, হোটেল টাইগার গার্ডেন, হোটেল ওয়েস্ট ইন্, হোটেল সিটি ইন, হোটেল মিলিনিয়াম ইত্যাদি মানসম্পন্ন হোটেল ছাড়াও সাধারণ মানের হোটেল রয়েছে।
সতর্কতা
[সম্পাদনা]সাগরে বনদস্যুদের উৎপাত, খাবার পানির অভাব, স্বাস্থ্য সেবা সংকট, বড়সড় ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছাসের প্রকোপ - প্রভৃতি বিষয়ে পূর্বেই তথ্য সংগ্রহ করে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে এখানে যাওয়া উচিত।