উইকিভ্রমণ থেকে

হাটহাজারী বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা।

জানুন[সম্পাদনা]

চট্টগ্রাম জেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার উত্তরে ২২°২৪´ থেকে ২২°৩৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৪১´ থেকে ৯১°৫৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে অবস্থিত হাটহাজারী উপজেলার আয়তন ২৪৬.৩২ বর্গ কিলোমিটার। হাটহাজারী থানা গঠিত হয় ১৯২৯ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে। হাটহাজারী উপজেলায় বর্তমানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অধীনস্থ ১নং ওয়ার্ড, ১টি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন রয়েছে।

নামকরণ[সম্পাদনা]

হাটহাজারী উত্তর চট্টগ্রামের এক ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। এক ঐতিহাসিক ঘটনার প্রেক্ষিতে হাটহাজারীর নামকরণ করা হয়। এর পূর্ব নাম ছিল আওরঙ্গবাদ। বর্তমান হাটহাজারী, উত্তর রাউজান ও ফটিকছড়ি নিয়ে আওরঙ্গবাদ গঠিত। আওরঙ্গবাদ পরগণায় চট্টগ্রামে মুঘল শাসনাধীন হওয়ার পর থেকেই মসনদধারী প্রথা চালু করে বারজন হাজারীকে অাভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ও বহিঃশত্রুর হাত থেকে রক্ষার দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছিল। আমলাতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার কারণে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার মুর্শিদাবাদের নবাবের আদেশ অমান্য ও অগ্রাহ্য করে হাজারীগণ দায়িত্ব পালনে অবহেলা করতে থাকেন এবং নবাবের বিরুদ্ধাচরণ করেন। চট্টগ্রামে নবাবের প্রতিনিধি মহাসিংহ হাজারীগণের ক্ষমতা খর্ব করতে এক কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে প্রতারণা করে সীতাকুণ্ডে নবাবের কাঁচারিতে দাওয়াত নিয়ে যান। তিনি বিশ্বাসঘাতকতা করে আটজন হাজারীকে বন্দি করতে সমর্থ হন। বারজন হাজারীর মধ্যে দক্ষিণ চট্টগ্রামের দুইজন নবাবের বশ্যতা স্বীকার করায় তাঁদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়। বাকি দশজনের মধ্যে আটজনকে বন্দি অবস্থায় মুর্শিদাবাদের নবাবের দরবারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। দুইজন হাজারী পালিয়ে প্রাণরক্ষা করেন। মুর্শিদাবাদের নবাব আটজন হাজারীকে লোহার পিঞ্জরে বন্দি করে গঙ্গা নদীতে ডুবিয়ে হত্যার আদেশ দেন। ফলে উত্তর চট্টগ্রামে হাজারীদের ক্ষমতা খর্ব হয়ে পড়ে। বেঁচে যাওয়া হাজারীদের মধ্যে বীরসিংহ হাজারী যে হাট প্রতিষ্ঠা করেন তাকেই আজকের হাটহাজারী বলা হয়। তখন ফার্সি ভাষার প্রচলন ছিল বলে এই হাটটি হাটে হাজারী বা হাটহাজারী নামে পরিচিতি লাভ করে।

জনসংখ্যা[সম্পাদনা]

২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী হাটহাজারী উপজেলার জনসংখ্যা ৪,৩১,৭৪৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২,১৫,২০১ জন এবং মহিলা ২,২৬,৫৪৭ জন। এ উপজেলার ৯০% লোক মুসলিম, ৯% হিন্দু এবং ১% বৌদ্ধ ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।

কীভাবে যাবেন[সম্পাদনা]

চট্টগ্রাম মহানগরীর অক্সিজেন মোড় থেকে হাটহাজারী উপজেলা সদরের দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। হাটহাজারী উপজেলা সদর থেকেই চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি এবং চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কদ্বয় বিভক্ত হয়েছে।

সড়কপথে[সম্পাদনা]

চট্টগ্রাম শহরের অক্সিজেন মোড় এলাকা থেকে বাস বা সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগে হাটহাজারী যাওয়া যায়।

রেলপথে[সম্পাদনা]

চট্টগ্রাম শহরের বটতলী অথবা ষোলশহর রেলস্টেশন থেকে নাজিরহাটগামী রেলযোগে হাটহাজারী যাওয়া যায়।

দর্শনীয় স্থান[সম্পাদনা]

  • চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম মহানগরীর অক্সিজেন মোড় থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার উত্তরে এবং হাটহাজারী উপজেলা সদর থেকে প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। বাস বা সিএনজি চালিত অটোরিক্সায় বিশ্ববিদ্যালয় ২নং গেইট নেমে সেখান থেকে রিক্সা বা অটোরিক্সা যোগে সহজেই যাওয়া যায়। এছাড়া নগরীর বটতলী অথবা ষোলশহর রেলস্টেশন থেকে ফ্রি রেলযোগে যাওয়া যায়।
  • হালদা নদী হাটহাজারী জেলার পূর্ব সীমান্ত জুড়ে অবস্থিত। এটি এশিয়ার বৃহত্তম মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে খ্যাত। চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে বাসযোগে অথবা নগরীর কাপ্তাই রাস্তার মাথা বা অক্সিজেন মোড় থেকে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগে মদুনাঘাট আসলেই দেখা যাবে হালদা নদী।
  • উদালিয়া চা বাগান হাটহাজারী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ফটিকছড়ি উপজেলার সুয়াবিল ইউনিয়ন ও হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের কিছু অংশ জুড়ে অবস্থিত। উপজেলা সদর থেকে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগে যাওয়া যায়।
  • আল্লামা আজিজুল হক শেরে বাংলা (রহ.) মাজার হাটহাজারী পৌরসভায় অবস্থিত। চট্টগ্রাম নগরীর অক্সিজেন মোড় থেকে বাস বা সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগে যাওয়া যায়।
  • সুলতান নশরত শাহ মাজার ও দীঘি চট্টগ্রাম নগরীর অক্সিজেন মোড় থেকে প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার উত্তরে এবং হাটহাজারী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে চিকনদণ্ডী ইউনিয়নের বড় দীঘির পাড় এলাকায় অবস্থিত। এটি বড় দীঘি নামেই পরিচিত এবং এলাকার নামও এ দীঘির কারণেই বড় দীঘির পাড় হিসেবে পরিচিত। অক্সিজেন মোড় বা হাটহাজারী উপজেলা সদর উভয় দিক থেকেই বাস বা সিএনজি যোগে যাওয়া যায়। এছাড়া নগরীর নিউমার্কেট এলাকা থেকে বাসে সরাসরি বড় দীঘির পাড় যাওয়া যায়।
  • ফকির মসজিদ হাটহাজারী বাজার সংলগ্ন এ মসজিদ পঞ্চাদশ শতাব্দীতে স্থাপিত হয়। চট্টগ্রাম নগরীর অক্সিজেন মোড় থেকে বাস বা সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগে যাওয়া যায়।
  • হাটহাজারী কৃষি ইনস্টিটিউট হাটহাজারী উপজেলা সদরের ২ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। উপজেলা সদর থেকে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগে যাওয়া যায়।
  • মন্দাকিনী শিব মন্দির হাটহাজারী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার উত্তরে ফরহাদাবাদ ইউনিয়নে অবস্থিত। সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগে যাওয়া যায়।
  • মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও গণকবর হাটহাজারী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার উত্তরে নাজিরহাট এলাকায় অবস্থিত। বাস বা সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগে যাওয়া যায়। এছাড়া চট্টগ্রাম নগরীর বটতলী বা ষোলশহর রেলস্টেশন থেকে নাজিরহাটগামী রেলযোগে যাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন[সম্পাদনা]

হাটহাজারীতে থাকার জন্য সরকারি পরিচালনাধীন উপজেলা পরিষদ ডাক বাংলো ছাড়াও ব্যক্তি মালিকানাধীন সুলভ মূল্যে থাকার মত হোটেল রয়েছে। এছাড়া হাটহাজারী চট্টগ্রাম শহরের অতি নিকটে হওয়ায় শহরের যে কোন মানের হোটেলে রাত্রি যাপন করা সম্ভব।

খাওয়া দাওয়া[সম্পাদনা]

হাটহাজারী পৌরসভা এলাকায় যে কোন রেস্টুরেন্টে সুলভ মূল্যে খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।