বিষয়বস্তুতে চলুন

উইকিভ্রমণ থেকে

আনোয়ারা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা।

জানুন

[সম্পাদনা]

চট্টগ্রাম জেলা সদর থেকে প্রায় ২৪ কিলোমিটার দক্ষিণে কর্ণফুলির দক্ষিণ পাড়ে ২২°০৭´ থেকে ২২°১৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৪৯´ থেকে ৯১°৫৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে অবস্থিত আনোয়ারা উপজেলার আয়তন ১৬৪.১৩ বর্গ কিলোমিটার। ১৮৭৬ সালে আনোয়ারা থানা গঠিত এবং ১৯৮৩ সালে আনোয়ারা থানাকে উপজেলায় রূপান্তরিত করা হয়। আনোয়ারা উপজেলায় বর্তমানে ১১টি ইউনিয়ন রয়েছে।

নামকরণ

[সম্পাদনা]

দেয়াঙ এর সামন্ত রাজা আনোপোড়মের নামানুসারে আনোয়ারা নামের উৎপত্তি হয়েছে। ১৫৯৩ সালে আরাকান রাজা মেঙ পলৌঙ (মুসলিম নাম - সেকান্দার শাহ্) মৃত্যু বরণ করলে তার বড় ছেলে মেঙ রাজ্যাগী (মুসলিম নাম - সলিম শাহ্) আরাকানের রাজা হন। তাঁর শাসনামলে ১৬০৩ সালে দেয়াঙ এর সামন্ত রাজা হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তাঁরই আপন ভাই আনাপোড়ম। কেন্দ্রীয় রাজার অবাধ্যতার কারনে আরাকানের রাজা আশি হাজার সৈন্য ও সাত হাজার রণ হস্তির এক বিশাল বাহিনী নিয়ে সামন্ত রাজা আনাপড়োম এর সামন্ত রাজ্য দেয়াঙ আক্রমণ করেন। উভয়পক্ষে ঘোরতর যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এই যুদ্ধে রাজা আনাপোড়ম নিজেও গুরুতর আহত হন এবং উভয়পক্ষের বিপুল সংখ্যক লোক হতাহত হয়। আরাকান বাহিনীর তীব্র আক্রমণের মুখে আনাপোড়ম স্ত্রী, পুত্র, বোন অরুন্ধতীসহ পর্তুগীজ সেনাপতি গঞ্জালিশের সাথে প্রচুর ধন সম্পদ নিয়ে পর্তুগীজ যুদ্ধ জাহাজ যোগে সন্দ্বীপ এ পালিয়ে যান। এর কিছুদিন পর আনাপোড়ম সন্দ্বীপ এ মারা যান। আনপোড়মের ধ্বংসস্তুপ রাজ কার্যালয়কে কেন্দ্র করে ঐ এলাকাটি আনাপোড়া নামে পরিচিত হয়ে উঠে। পরবর্তীকালে এ এলাকা আনাপোড়া, আনোপাড়া, আন্‌ওয়ারা, আনোওয়ারা এবং সর্বশেষ আনোয়ারা নামে পরিচিতি লাভ করে।

জনসংখ্যা

[সম্পাদনা]

২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী আনোয়ারা উপজেলার জনসংখ্যা ২,৫৯,০২২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১,২৬,৭০৯ জন এবং মহিলা ১,৩২,৩১৩ জন। এ উপজেলার ৮৪% মুসলিম, ১৪% হিন্দু এবং ২% বৌদ্ধ ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।

কীভাবে যাবেন

[সম্পাদনা]

সড়কপথে

[সম্পাদনা]

চট্টগ্রাম শহরের বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে শাহ আমানত সেতু পার হয়ে বাস বা সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগে আনোয়ারা উপজেলায় যাওয়া যায়।

নৌপথে

[সম্পাদনা]

চট্টগ্রাম নগরীর ১৪নং এবং ১৫নং ঘাট থেকে নৌযোগেও আনোয়ারা উপজেলায় যেতে পারেন।

দর্শনীয় স্থান

[সম্পাদনা]
  • শাহ মোহছেন আউলিয়া (রহ.) মাজার চট্টগ্রাম শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে বটতলী ইউনিয়নে অবস্থিত বিখ্যাত এ মাজারটিতে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে বাসযোগে সরাসরি বটতলী যাওয়া যায়। এছাড়া সল্প সময়ে ব্যক্তিগত গাড়ি, অটোরিক্সা, টেম্পু ইত্যাদি যানবাহন যোগেও সহজে যাতায়াত করা যায়।
  • পারকি সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রাম শহরের বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে সরাসরি বৈরাগ ইউনিয়নের মহালখান বাজার পর্যন্ত সড়ক পথে বাস চলাচল করে। মহালখান বাজার হতে ব্যক্তিগত গাড়ি, অটোরিক্সা, টেম্পু যোগেও সহজে যাতায়াত করা যায়।
  • বাংলাদেশ মেরিন একাডেমী একটি সংরক্ষিত এলাকা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পূর্ব অনুমতি সাপেক্ষে স্থানটি পরিদর্শনের সুযোগ রয়েছে। চট্টগ্রাম শহরের বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে সরাসরি বৈরাগ ইউনিয়নের মহালখান বাজার পর্যন্ত সড়ক পথে বাস চলাচল করে। মহালখান বাজার হতে ব্যক্তিগত গাড়ি, অটোরিক্সা, টেম্পু যোগেও সহজে যাতায়াত করা যায়।
  • কর্ণফুলি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) অ্যামোনিয়া/ইউরিয়া সার প্রস্তুতের রপ্তানিমুখী কারখানা যা বাংলাদেশ তথা এ অঞ্চলে এ ধরনের একমাত্র প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশে আরও ৬টি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অ্যামোনিয়া/ইউরিয়া সার উৎপাদন প্রতিষ্ঠান রয়েছে যা অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা পূরণ করে। কাফকো হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ বহুজাতিক যৌথ উদ্যোগ প্রকল্প। চট্টগ্রাম শহরের বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে সরাসরি বাসযোগে যাওয়া যায়।
  • চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা (সিইউএফএল) বাংলাদেশের বৃহত্তম ইউরিয়া সার কারখানা। চট্টগ্রাম শহরের বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে সরাসরি বাসযোগে যাওয়া যায়।
  • কোরিয়ান ইপিজেড একটি সংরক্ষিত এলাকা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পূর্ব অনুমতি সাপেক্ষে স্থানটি পরিদর্শন সুযোগ রয়েছে। চট্টগ্রাম শহরের বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে সরাসরি আনোয়ারা অথবা বাঁশখালী বাসযোগে যাওয়া যায়। এছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ি, অটোরিক্সা, টেম্পু যোগেও সহজে যাতায়াত করা যায়।

এছাড়াও এ উপজেলার অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • দেয়াঙ পাহাড়
  • ডিএপিএফসিএল
  • পুরাতন আবহাওয়া অফিস
  • বিমান বাহিনীর রাডার স্টেশন, বটতলী
  • বাতিঘর, রায়পুর
  • আকবরী মসজিদ
  • ছুরুত বিবির মসজিদ
  • ধলা বিবির মসজিদ
  • মনু মিয়ার দীঘি
  • ওয়ান্ডার গার্ডেন
  • হিলটপ পার্ক
  • জমিদার বাড়ি, পরৈকোড়া

কোথায় থাকবেন

[সম্পাদনা]

আনোয়ারা, বটতলী, চাতরী প্রভৃতি এলাকার যে কোন হোটেলে সুলভ মূল্যে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

খাওয়া দাওয়া

[সম্পাদনা]

আনোয়ারা, বটতলী, চাতরী প্রভৃতি এলাকায় অথবা চট্টগ্রাম মহানগরীর যে কোন রেস্টুরেন্টে সুলভ মূল্যে খেতে পারেন।