উইকিভ্রমণ থেকে

চালন্দা গিরিপথ বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটে অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ন একটি গিরিপথ এবং দর্শনীয় স্থান।

বর্ণনা[সম্পাদনা]

চালন্দা গিরিপথের পাহাড়ের গা বেয়ে শীতল পানি নেমে আসে এবং ছড়া দিয়ে তা বয়ে চলে। পাহাড়ী স্থানগুলোর কোথাও ভেজা, কোথাও শুকনো। পাহাড়ের খাড়া ঢাল বেয়ে এবং গিরির খাঁজে খাঁজে রোদ ঝিলিক দিয়ে উঠে। আবার কোথাও কোথাও কুয়াশার মতো আবছা অন্ধকার। পাহাড়ের গা দেখতে নান্দনিক কারুকাজ করার মতো হলেও যত্নের অভাবে অনেক জায়গায় শেওলা ধরে গেছে। গভীর অরণ্য পরিবেষ্টিত সরু এই গিরিপথ ধরে এগিয়ে যেতে যেতে নিচ দিয়ে অবিরাম বয়ে যাওয়া ঠাণ্ডা পানির স্রোতধারা চোখে পড়ে। সেই পানির শীতল স্পর্শ দর্শনার্থীদের মন আনন্দে ভরিয়ে দেয়।

গিরিপথে প্রায় আধা কিলোমিটার ঝুঁকিহীনভাবে যাওয়া গেলেও ক্রমশ ভেতরের দিকে ঢুকলে শরীর হিমশীতল হয়ে উঠে এবং ভৌতিক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। কারন, দুই পাশের পাহাড়ের মধ্যে পথ এতই সরু যে, মাঝে মাঝে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে পড়ে। শেওলা ধরা দুই পাশের পাহাড়ের মধ্য দিয়ে হাত ও পায়ের সমন্বয়ে এগিয়ে যেতে হয়। গিরিপথের একটু ভেতরে গেলেই পানি কোমর পর্যন্ত উঠে যায় এবং সামান্য অসাবধানতায় পাথরে আঘাত পাওয়ার তীব্র সম্ভাবনা থাকে।

চালন্দা গিরিপথে পাহাড়ী সৌন্দর্যের পাশাপাশি পাখির কিচিরমিচির এবং হরিণের ছোটাছুটি দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এছাড়াও, এখানে হরেক-রকম সাপের উপদ্রব লক্ষ করা যায়। এজন্য, দর্শনার্থীরা সঙ্গে করে লাঠি নিয়ে যান।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

চালন্দা গিরিপথ ২০১১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ভ্রমণপিপাসু শিক্ষার্থী দ্বারা প্রথম আবিষ্কৃত হয়। ভারতের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্বদ্যালয়ের চ যোগ করে ‘চালন্দা’ নামকরণ করা হয়।

কীভাবে যাবেন?[সম্পাদনা]

চট্টগ্রামের বটতলি স্টেশন বা ষোলশহর স্টেশন হতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেনে করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যেতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ষ্টেশন হতে অল্প পায়ে হেঁটে চলে যেতে হবে জিরো পয়েন্টে। জিরো পয়েন্ট হতে টমটমে করে কলার ঝুপড়ি নামতে হবে। ঝুপড়ি হতে ৬/৮ মিনিট হাঁটলেই পানির ছড়া দেখা যাবে। পানির ছড়া (মিঠেছড়া) ধরে সোজা হাঁটতে থাকলে একসময় গিরিপথের মুখ দেখা যাবে।

খাওয়া-দাওয়া[সম্পাদনা]

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ভাতঘর, ঢাকা হোটেল, মওয়ের দোকানসহ বেশকিছু খাবার হোটেল ও রেস্তোরাঁ রয়েছে। এছাড়া, চট্টগ্রাম শহরে এসেও খাওয়া-দাওয়া করা যাবে।

রাত্রিযাপন[সম্পাদনা]

চট্টগ্রাম শহরের স্টেশন রোড়, জেএসসি মোড় ও আগ্রাবাদ এলাকায় বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল রয়েছে, যেগুলোতে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। এদের মধ্যে হোটেল স্টার পার্ক, হোটেল ডায়মন্ড পার্ক, হোটেল হিলটন সিটি, হোটেল প্যারামাউন্ট ও হোটেল সিলমন উল্লেখযোগ্য।

ছিনতাই[সম্পাদনা]

চালন্দা গিরিপথ ভালো দর্শনীয় স্থান হলেও এখানে ঘুরতে এসে শিক্ষার্থীরা প্রায়ই ছিনতাইয়ের শিকার হয়। এখানে মোবাইলের নেটওয়ার্ক ঠিকমত কাজ করে না। তাই, নিরাপত্তার স্বার্থে দুর্গম এ এলাকায় শিক্ষার্থীদের না যাওয়াই ভালো অথবা অনেকজন একসাথে যাওয়া উচিত।

চিত্রশালা[সম্পাদনা]